এসো এক বিকেলে,
কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ঝরা পথে,
শ্রাবন বেলার সিক্ত মেঘে,
নিভু নিভু গোধূলীর অন্তপ্রহরে,
অধরা মায়াবিথীর স্বপ্নিল উপন্যাসে,...
আমি আছি, একমুঠো স্বপ্ন হাতে অপেক্ষায় তোমার,
তুমি এসো, তুমি এসো,
এক বিকেলে।
আমি বৃষ্টি ঝরাবো,
ঠান্ডা হাওায়ায়
মাতাবো তোমার চুল,
পাখির ডানায় ওড়াবো তোমায়,
তোমার আচোঁলে দেব বলে,
ভালোবাসার এক মায়া ছোয়া পৃথিবী রেখেছি এ মনে।
তুমি এসো, তুমি এসো,
এক বিকেলে।
আমি আছি একমুঠো ভালবাসা হাতে ,
চৈএে তোমার ছায়াসঙ্গি হবার পূর্ণ বাসনা নিয়ে,
চাঁদের পূর্ণীমায়,
আধোআলো মায়ায়, ক্লান্তিহীন অবগাহনে,
তোমারি অপেক্ষায়,
তুমি এসো, তুমি এসো,
এক বিকেলে।
চোখে আমার তোমার নেশা, শ্বাসে আমার তোমার নেশা, সারা দেহে তোমার নেশা রগে রগে তোমার নেশা, শরীরে আমার তুমি বহ, তোমায় পান করে নেশা নিয়ে সুখ করি । জ্ঞান হারাই, হই মাতাল !
লাইফ টার্ন
লাইফ টার্ন
আব্দুল্লাহ মামুন অক্ষ
--------------------------------------------------------------------
বিমানবন্দর থেকে বিমান ছেড়েছে ঘন্টা তিনেক হলো। বুঝবার উপায় নেই কোন দেশে আছি এখন।
জানালার ওপাশে শুধু শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি,পেজো তুলোর মত নরম মেঘ।
মেঘের বিশাল পাহাড় কেটে কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বিমান।
কেনো জানি প্রকৃতির এই বিষয়গুলো মনে আর দাগ কাটতে পারে না।
কি জানি কেনো! হয়তো এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি কিংবা বুড়িয়ে যাচ্ছি!
বয়স তো আর কম হলো না... আমার পাশের ভদ্রলোকটি বেশ।
বিমানবন্দরেই প্রথম পরিচয় হলো।প্রথম পরিচয়েই আলাপ বেশ জমে গেছে।
এমনকি ঘরকন্নার ব্যাপারগুলোও।ঘরে তার সুন্দরী স্ত্রী। সেই মহিয়সীর জন্য মাঝে মাঝেই তিনি বেশ উতলা হয়ে যাচ্ছেন।
অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়লে যে রকম হয়! তবে লোকটার ব্যবহার অমায়িক।
মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা তার চোখে মুখে।আমার পরিচয় পেয়েই তিনি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হঠাৎ।
-আরে ধ্রুব সাহেব! আপনার লেখা পড়েছি।বেশ লেখেন আপনি!
-এ আর এমন কী! লেখালেখি আমাররটেশা নয়,বলতে পারেন নেশা।
আর জীবনকে অনেক কাছের থেকে দেখেছি তো, তাই জীবনের অলি-গলি মোটামুটি চেনা।
সেই কথাগুলিই উগড়ে দেওয়া আর কি!
-সে আপনি যাই বলেন! মাইরি বলছি,আপনার লেখায় জীবন খুঁজে পাওয়া যায়।আমার স্ত্রীও আপনার লেখার ভক্ত।
মাঝে মাঝে আপনার লেখা পড়ে ওকে কাঁদতে দেখেছি।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত।
যাহোক, সুইজারল্যান্ডে কি করছেন আপনি?
-সুইজারল্যান্ডে একটি কোম্পানিতে মেকানিকাল ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি।
আর এই দু'এক লাইন লিখি।এই আর কী!
এয়ার হোস্টেস এসে কফি আর লাইট ফুড দিয়ে গেলো। দেখতে বেশ মেয়েগুলি!
Smart বলতে যা বুঝায়।সবসময় মুখে হাসি আর কেমন যেনো একটা বিনীত ভাব।
ঝক্কিঝামেলা ও কি কম পোহাতে হয় এদেরকে!
সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,বিশেষ করে কোমর বুকের খালি অংশের দিকে।
আবার কেউবা পেরেও না পারার ভান করে বলে,
"Excuse me,would please help me to bind my
seat belt?"
ওদের শরীরে স্পর্শ লাগানোর ফন্দি একটা! ওরা আর কি করবে!
"sure sure,why not?"বলা ছাড়া আর কি করবে।যাদ্রীদের জন্য ওরা নিবেদিত প্রাণ!
অধরার ও এয়ার হোস্টেস হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।ও প্রায়ই বলতো,"দেখো আমি ঠিকই এয়ার হোস্টেস হবো!"
ওকে খোঁচা দিয়ে বলতাম,"হু,মহারাণী এয়ার হোস্টেস হবেন!এয়ার হোস্টেস হতে হলে চেহারায় কিছু থাকা লাগে বুঝলেন!
তোমাকে দেখতে যা লাগে না!
তাতে..."
মূহুর্তের মধ্যে দপ করে নিভে যেতো ও।অনেকক্ষণ রাগ করে থাকত।তারপর বলতো,"তুমি চাওনা আমি এয়ারহোস্টেস হই।
তো এত ঢং করার দরকার কি,হ্যাঁ??"
-
তুমি তো জানো,তোমাকে ছাড়া আমি দূরে থাকতে পারবো না,তবু কেনো...
-আচ্ছা বাবা,ঠিক আছে।মন খারাপ করছো কেনো?সারাজীবন আমি তোমার লেজ ধরেই ঘুরে বেড়াবো! খুশি???
বলেই ওর সেই ভুবনভোলানো হাসি,যা আমি কোনদিনও হয়তো ভুলতে পারবো না,পারিনি।
ওর স্মৃতি আমাকে এটি ভুলতে দিবে না। কি জানি কোথায় আছে ও!কতদিন দেখি না ওকে।
শেষবারের মত ওকে দেখেছিলাম কোনো এক ভ্যালেন্টাইন ডে-তে।
কার্জন হলের সামনে সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা কররেছিলো ও।
টিউশনি করে আসতে আসতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন।
পেছন থেকে এসে ওর চোখটা ধরে চমকে দিয়েছিলাম। একটা নীল শাড়ি পড়েছিল ও।
আগের দিন নিউমার্কেট থেকে সারা বিকেলটা ঘুরে টিউশনির পুরো টাকা দিয়ে এটা কিনেছিলাম।
নীল শাড়িতে অন্যরকম লাগছিলো ওকে। তারপর রিকশায় করে অনেকক্ষণ ঘুরেছিলাম।তারপর বলাকাতে।
তাও প্রায় বিশ বছর হতে চললো। বিশটি বছর!!
হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বিমানের জানালার ওপারে পৃথিবীতে আঁধার নেমেছে ততক্ষণে।
জ্যোৎস্নার আলো ফুটছে কেবল। রুহুল সাহেবের চোখে-মুখে ঘুম লেগে আছে।ঝিমুচ্ছেন তিনি।
মায়াময় একটি ঘোরলাগা পরিবেশ চারিদিকে। কেনো জানি অধরাকে মনে পড়ছে খুব।
স্বপ্নের মত ছিলো দিনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকতো ও,আর আমি আহসানউল্লাহ হলে।
কোনোদিন টি.এস.সি তে জম্পেশ আড্ডা,কোনদিন বা ধানমন্ডি লেক।
আবার কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো।রিকশায় আবার কখনো শহর চষে বেড়ানো।
কোনো সন্ধ্যায় আবার বলাকায় সিনেমা দেখা। রাত করে হলে ফিরা।
ছোটোখাটো রোমাঞ্চ, হাতে হাত,লজ্জ্বায় ছোট্ট করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেওয়া, তারপর ওর নাকমুখ লাল হয়ে যাওয়া!
এভাবেই চলছিলো দিনগুলি। হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন। কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেলাম।
নিজেকে নিজের সাথে মেলাতে পারতাম না। মায়ের অনুপ্রেরণা,বাবার স্বপন,ছোটো বোনদের নিষ্পাপ মুখ আমাকে ভেঙে পড়তে দেয় নি।
আর একজনের ভালোবাসা নীরবে কাজ করে যেতো!মাঝে মাঝে প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়তাম।
নীরবে কান্না করতাম,কিন্তু এটাও চোখ এড়াতো না ওর।
মায়ের কষ্টেভরা অথচ প্রত্যয়ী মুখ,বাবার বুনে দেওয়া স্বপ্নবীজ আর ওর স্নেহমাখা ভালোবাসার কারণেই হারিয়ে যাওয়া নিজেকে ফিরে পেতাম।
স্বপ্ন দেখতাম নততুন করে বাঁচার,বাঁচানোর। স্কলারশীপ নিয়ে সুইজারল্যান্ড গেলাম।
তারপর থেকে কেনো জানি অধরার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হতে লাগলো।ও কেননো জানি অন্যরকম হতে লাগলো।
ঠিক আগের মতো ওকে মিলাতে পারতাম না। তারপর পৃথক হয়ে গেলাম দু'জনে। ৪ বছরের প্রেমে চির ধরলো।
এর দায় আমি ওকে দিইনা কখনো,আবার নিজেকেও অপরাধীর কাঠগরায় দাঁড় করাতে পারি না।
প্রথম প্রথম যোগাযোগ হতো।তারপর আর হয়ে উঠে নি।একবার শুনেছিলাম বিয়ে হয়েছে ওর কোন এক
বিজনেসম্যানের সাথে পারিবারিক ভাবে।সম্ভবত সবুজ বলেছিল।খবরটা যে খুব ভালো লেগেছিল তা নয়।
বরং খুব হতাশ হয়ে যেতাম,একাকীত্ব চারিদিক হতে গিলে ফেলতে চাইত আমাকে।
ও অন্য কারো জীবন সঙ্গিনী এটা ভাবতেই এখনো বুকের বামপাশে চিনচিন করে ব্যথা করে।
-ধ্রুব সাহহেব,এয়ারপোর্টে কে আসছে নিতে? ভাবি নিশ্চয়ই!
ভাবনায় ছেদ পড়ল রুহুল সাহেবের কন্ঠ শুনে।সেই সাথে প্রশ্নটার জন্য সাময়িক একটা শূন্যতাও অনুভব করলাম।
থতমত করে হেসে দিয়ে বললাম,"ভাবী! ভাবী আসবে কোত্থেকে!?"
-কেনো বিয়ে করেননি নাকি? -নাহ তা আর হলো কোথায়!
রুহুল সাহেব আশ্চর্য হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।
মনে মনে ভাবছিলেন, 'এ আধা চুল পাকা বুড়ো বলে কি!' তার জিগ্যাসু চোখে অনেক প্রশ্ন বুঝতে পারছি।
আমার হাসি দেখে তিনি বুঝে নিলেন মনে হয়,আর প্রশ্ন করলেন না।আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে আমার সবচেয়ে বড় এলার্জি।আর অধরা এই কাজটা করতো সবচেয়ে বেশি।
ম্যাজিস্ট্রেটের মত,'কেন চুল এতো ছোট করেছি, কেন শুকনো শুকনো লাগছে তোমায়! কত্ত প্রশ্ন!!
রুহুল সাহেব বললেন, "যদি কিছু মনে না করেন রাতে আমার বাসাতেই থাকেন,ও অনেক খুশি হবে।
আপনার রেখা ও দারুণ পছন্দ করে।"
-আচ্ছা সে দেখা যাবে। বিমান বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পৌঁছেছে অনেক্ষণ।একটু পরেই হয়তো ল্যান্ড করবে এয়ারপোর্টে।
মাটি থেকে বিমানের দূরত্ব কমছে। আর আলোকময় ঢাকাকে অন্যরকম লাগছিল।শতশত তারা জ্বলছে যেননিচে।
আর চারিদিক কেমন মায়াময়,স্তব্ধ। বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামছে।
জ্যোৎস্নার আলোয় রানওয়েতে বিমানের ছায়ার দৈর্ঘ্য বাড়ছে।তারপর তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে এটি রানওয়ে স্পর্শ করলো।
মূহুর্তেই শিহরণ খেলে গেল শরীরে,কেঁপে কেঁপে উঠছে গা।কত বছর পর ফিরে আসা আমার জন্মভূমিতে।
উত্তেজনায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।রানওয়েতে অনেক্ষণ দৌঁড়িয়ে বিমান থামল।বিমান থেকে নামলাম।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম অনেক্ষণ। বাতাসে আমার জন্মভূমির মাটির সোদা গন্ধ!
রিসেপশনে এলাম।রুহুল সাহেবের স্ত্রী এসেছেন নাকি গাড়ি নিয়ে। আর তার ছেলে।
রুহুল সাহেব কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন । সামনের দিকে।চার-পাঁচ বছরের একটা ছেলেতাকে' বাবা বাবা' বলে উঠল।
রুহুল সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিলেন। বাবা-ছেলের মিলন। দেখতে বেশ ভালোই লাগছিলো। পাশেই তার স্ত্রী।
নীল শাড়ি পরেছেন তিনি।কিন্তু চেহারাটা যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে।রুহুল সাহেববকে জিগ্যাসা করলেন,"কেমন
ছিলে,পথে কোন সমসা হয়নি তো?"
চমকে উঠলাম।খুব পরিচিত একটা কন্ঠ। এবার আর চিনতে ভুল হলো না।
ভালো করে তার দিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠি,'অধরা!'
নিজেকে জোর করে সামলালাম। ভাগ্য আবার আমাকে নিয়ে খেলছে।
রুহুল সাহেব তার স্ত্রীরর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন,"আমার স্ত্রী অধরা শিকদার,আর অধরা দেখো তো ইনাকে চিনো কি না?" অধরার মাথা নিচু।
ও আমার দিকে তাকাতে পারছে না।
আরে ইনি ধ্রুব সাহেব,তোমার প্রিয় লেখক।ধরে এনেছি।এখন তুমিই জানো এটাকে কি করবে!"
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ও আমার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতার হাসি দিলো।
ঠিক বিশ বছর আগের সেই হাসি,বুঝলাম হাসতে ওররপ্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। অভাগা আমি তাও পারলাম না।
ও কখনো এটা আশা করেনি। ঘটনার আকস্মিকতায় ও স্তব্ধ।রুহুল সাহেবরে বললাম,"আমার গাড়ি আসছে, বিদায় তাহলে"
-সে কি গাড়ি আসছে মানে?
না ভাই,তা হবে না।আপনি আজ রাতে থাকবেন আমার বাসায়।
-সে কি করে হয়!আমি হোটেলে রুম বুক করেছি যে!যাই ভাই।
হয়তো দেখা হবে জীবনের কোন এক জংশনে!
রুহুল সাহেবের ছেলেকে আদর করে কোনোমতো ওর সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচলাম।
গাড়ি এসেছিল।লাগেজগুলো পিছনে উঠানোর পর গাড়িতে উঠে বসলাম।
রবীন্দ্র সংগীত বাজছিল টেপরেকর্ডারে।কেন জানি কান্না পাচ্ছিল। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে ওর।
চেহারায় ব্যক্তিত্ব আর বয়সের দৃঢ় ছাপ।সেই নীল শাড়ির অধরা নীল শাড়িতেই কত ভিন্ন!
সময় কত বদলে দেয় মানুষকে। আমি জানি ও এখন কাঁদছে।নীল শাড়ির আঁচল দিয়ে কান্না লুকানোর প্রানপণ চেষ্টা করছে।
ভুলে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিশ বছর পরে দেখা আমাকে। পারবে কি ও?
ধ্রুব অক্ষ
আব্দুল্লাহ মামুন অক্ষ
--------------------------------------------------------------------
বিমানবন্দর থেকে বিমান ছেড়েছে ঘন্টা তিনেক হলো। বুঝবার উপায় নেই কোন দেশে আছি এখন।
জানালার ওপাশে শুধু শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি,পেজো তুলোর মত নরম মেঘ।
মেঘের বিশাল পাহাড় কেটে কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বিমান।
কেনো জানি প্রকৃতির এই বিষয়গুলো মনে আর দাগ কাটতে পারে না।
কি জানি কেনো! হয়তো এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি কিংবা বুড়িয়ে যাচ্ছি!
বয়স তো আর কম হলো না... আমার পাশের ভদ্রলোকটি বেশ।
বিমানবন্দরেই প্রথম পরিচয় হলো।প্রথম পরিচয়েই আলাপ বেশ জমে গেছে।
এমনকি ঘরকন্নার ব্যাপারগুলোও।ঘরে তার সুন্দরী স্ত্রী। সেই মহিয়সীর জন্য মাঝে মাঝেই তিনি বেশ উতলা হয়ে যাচ্ছেন।
অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়লে যে রকম হয়! তবে লোকটার ব্যবহার অমায়িক।
মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা তার চোখে মুখে।আমার পরিচয় পেয়েই তিনি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হঠাৎ।
-আরে ধ্রুব সাহেব! আপনার লেখা পড়েছি।বেশ লেখেন আপনি!
-এ আর এমন কী! লেখালেখি আমাররটেশা নয়,বলতে পারেন নেশা।
আর জীবনকে অনেক কাছের থেকে দেখেছি তো, তাই জীবনের অলি-গলি মোটামুটি চেনা।
সেই কথাগুলিই উগড়ে দেওয়া আর কি!
-সে আপনি যাই বলেন! মাইরি বলছি,আপনার লেখায় জীবন খুঁজে পাওয়া যায়।আমার স্ত্রীও আপনার লেখার ভক্ত।
মাঝে মাঝে আপনার লেখা পড়ে ওকে কাঁদতে দেখেছি।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত।
যাহোক, সুইজারল্যান্ডে কি করছেন আপনি?
-সুইজারল্যান্ডে একটি কোম্পানিতে মেকানিকাল ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি।
আর এই দু'এক লাইন লিখি।এই আর কী!
এয়ার হোস্টেস এসে কফি আর লাইট ফুড দিয়ে গেলো। দেখতে বেশ মেয়েগুলি!
Smart বলতে যা বুঝায়।সবসময় মুখে হাসি আর কেমন যেনো একটা বিনীত ভাব।
ঝক্কিঝামেলা ও কি কম পোহাতে হয় এদেরকে!
সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,বিশেষ করে কোমর বুকের খালি অংশের দিকে।
আবার কেউবা পেরেও না পারার ভান করে বলে,
"Excuse me,would please help me to bind my
seat belt?"
ওদের শরীরে স্পর্শ লাগানোর ফন্দি একটা! ওরা আর কি করবে!
"sure sure,why not?"বলা ছাড়া আর কি করবে।যাদ্রীদের জন্য ওরা নিবেদিত প্রাণ!
অধরার ও এয়ার হোস্টেস হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।ও প্রায়ই বলতো,"দেখো আমি ঠিকই এয়ার হোস্টেস হবো!"
ওকে খোঁচা দিয়ে বলতাম,"হু,মহারাণী এয়ার হোস্টেস হবেন!এয়ার হোস্টেস হতে হলে চেহারায় কিছু থাকা লাগে বুঝলেন!
তোমাকে দেখতে যা লাগে না!
তাতে..."
মূহুর্তের মধ্যে দপ করে নিভে যেতো ও।অনেকক্ষণ রাগ করে থাকত।তারপর বলতো,"তুমি চাওনা আমি এয়ারহোস্টেস হই।
তো এত ঢং করার দরকার কি,হ্যাঁ??"
-
তুমি তো জানো,তোমাকে ছাড়া আমি দূরে থাকতে পারবো না,তবু কেনো...
-আচ্ছা বাবা,ঠিক আছে।মন খারাপ করছো কেনো?সারাজীবন আমি তোমার লেজ ধরেই ঘুরে বেড়াবো! খুশি???
বলেই ওর সেই ভুবনভোলানো হাসি,যা আমি কোনদিনও হয়তো ভুলতে পারবো না,পারিনি।
ওর স্মৃতি আমাকে এটি ভুলতে দিবে না। কি জানি কোথায় আছে ও!কতদিন দেখি না ওকে।
শেষবারের মত ওকে দেখেছিলাম কোনো এক ভ্যালেন্টাইন ডে-তে।
কার্জন হলের সামনে সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা কররেছিলো ও।
টিউশনি করে আসতে আসতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন।
পেছন থেকে এসে ওর চোখটা ধরে চমকে দিয়েছিলাম। একটা নীল শাড়ি পড়েছিল ও।
আগের দিন নিউমার্কেট থেকে সারা বিকেলটা ঘুরে টিউশনির পুরো টাকা দিয়ে এটা কিনেছিলাম।
নীল শাড়িতে অন্যরকম লাগছিলো ওকে। তারপর রিকশায় করে অনেকক্ষণ ঘুরেছিলাম।তারপর বলাকাতে।
তাও প্রায় বিশ বছর হতে চললো। বিশটি বছর!!
হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বিমানের জানালার ওপারে পৃথিবীতে আঁধার নেমেছে ততক্ষণে।
জ্যোৎস্নার আলো ফুটছে কেবল। রুহুল সাহেবের চোখে-মুখে ঘুম লেগে আছে।ঝিমুচ্ছেন তিনি।
মায়াময় একটি ঘোরলাগা পরিবেশ চারিদিকে। কেনো জানি অধরাকে মনে পড়ছে খুব।
স্বপ্নের মত ছিলো দিনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকতো ও,আর আমি আহসানউল্লাহ হলে।
কোনোদিন টি.এস.সি তে জম্পেশ আড্ডা,কোনদিন বা ধানমন্ডি লেক।
আবার কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো।রিকশায় আবার কখনো শহর চষে বেড়ানো।
কোনো সন্ধ্যায় আবার বলাকায় সিনেমা দেখা। রাত করে হলে ফিরা।
ছোটোখাটো রোমাঞ্চ, হাতে হাত,লজ্জ্বায় ছোট্ট করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেওয়া, তারপর ওর নাকমুখ লাল হয়ে যাওয়া!
এভাবেই চলছিলো দিনগুলি। হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন। কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেলাম।
নিজেকে নিজের সাথে মেলাতে পারতাম না। মায়ের অনুপ্রেরণা,বাবার স্বপন,ছোটো বোনদের নিষ্পাপ মুখ আমাকে ভেঙে পড়তে দেয় নি।
আর একজনের ভালোবাসা নীরবে কাজ করে যেতো!মাঝে মাঝে প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়তাম।
নীরবে কান্না করতাম,কিন্তু এটাও চোখ এড়াতো না ওর।
মায়ের কষ্টেভরা অথচ প্রত্যয়ী মুখ,বাবার বুনে দেওয়া স্বপ্নবীজ আর ওর স্নেহমাখা ভালোবাসার কারণেই হারিয়ে যাওয়া নিজেকে ফিরে পেতাম।
স্বপ্ন দেখতাম নততুন করে বাঁচার,বাঁচানোর। স্কলারশীপ নিয়ে সুইজারল্যান্ড গেলাম।
তারপর থেকে কেনো জানি অধরার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হতে লাগলো।ও কেননো জানি অন্যরকম হতে লাগলো।
ঠিক আগের মতো ওকে মিলাতে পারতাম না। তারপর পৃথক হয়ে গেলাম দু'জনে। ৪ বছরের প্রেমে চির ধরলো।
এর দায় আমি ওকে দিইনা কখনো,আবার নিজেকেও অপরাধীর কাঠগরায় দাঁড় করাতে পারি না।
প্রথম প্রথম যোগাযোগ হতো।তারপর আর হয়ে উঠে নি।একবার শুনেছিলাম বিয়ে হয়েছে ওর কোন এক
বিজনেসম্যানের সাথে পারিবারিক ভাবে।সম্ভবত সবুজ বলেছিল।খবরটা যে খুব ভালো লেগেছিল তা নয়।
বরং খুব হতাশ হয়ে যেতাম,একাকীত্ব চারিদিক হতে গিলে ফেলতে চাইত আমাকে।
ও অন্য কারো জীবন সঙ্গিনী এটা ভাবতেই এখনো বুকের বামপাশে চিনচিন করে ব্যথা করে।
-ধ্রুব সাহহেব,এয়ারপোর্টে কে আসছে নিতে? ভাবি নিশ্চয়ই!
ভাবনায় ছেদ পড়ল রুহুল সাহেবের কন্ঠ শুনে।সেই সাথে প্রশ্নটার জন্য সাময়িক একটা শূন্যতাও অনুভব করলাম।
থতমত করে হেসে দিয়ে বললাম,"ভাবী! ভাবী আসবে কোত্থেকে!?"
-কেনো বিয়ে করেননি নাকি? -নাহ তা আর হলো কোথায়!
রুহুল সাহেব আশ্চর্য হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।
মনে মনে ভাবছিলেন, 'এ আধা চুল পাকা বুড়ো বলে কি!' তার জিগ্যাসু চোখে অনেক প্রশ্ন বুঝতে পারছি।
আমার হাসি দেখে তিনি বুঝে নিলেন মনে হয়,আর প্রশ্ন করলেন না।আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে আমার সবচেয়ে বড় এলার্জি।আর অধরা এই কাজটা করতো সবচেয়ে বেশি।
ম্যাজিস্ট্রেটের মত,'কেন চুল এতো ছোট করেছি, কেন শুকনো শুকনো লাগছে তোমায়! কত্ত প্রশ্ন!!
রুহুল সাহেব বললেন, "যদি কিছু মনে না করেন রাতে আমার বাসাতেই থাকেন,ও অনেক খুশি হবে।
আপনার রেখা ও দারুণ পছন্দ করে।"
-আচ্ছা সে দেখা যাবে। বিমান বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পৌঁছেছে অনেক্ষণ।একটু পরেই হয়তো ল্যান্ড করবে এয়ারপোর্টে।
মাটি থেকে বিমানের দূরত্ব কমছে। আর আলোকময় ঢাকাকে অন্যরকম লাগছিল।শতশত তারা জ্বলছে যেননিচে।
আর চারিদিক কেমন মায়াময়,স্তব্ধ। বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামছে।
জ্যোৎস্নার আলোয় রানওয়েতে বিমানের ছায়ার দৈর্ঘ্য বাড়ছে।তারপর তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে এটি রানওয়ে স্পর্শ করলো।
মূহুর্তেই শিহরণ খেলে গেল শরীরে,কেঁপে কেঁপে উঠছে গা।কত বছর পর ফিরে আসা আমার জন্মভূমিতে।
উত্তেজনায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।রানওয়েতে অনেক্ষণ দৌঁড়িয়ে বিমান থামল।বিমান থেকে নামলাম।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম অনেক্ষণ। বাতাসে আমার জন্মভূমির মাটির সোদা গন্ধ!
রিসেপশনে এলাম।রুহুল সাহেবের স্ত্রী এসেছেন নাকি গাড়ি নিয়ে। আর তার ছেলে।
রুহুল সাহেব কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন । সামনের দিকে।চার-পাঁচ বছরের একটা ছেলেতাকে' বাবা বাবা' বলে উঠল।
রুহুল সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিলেন। বাবা-ছেলের মিলন। দেখতে বেশ ভালোই লাগছিলো। পাশেই তার স্ত্রী।
নীল শাড়ি পরেছেন তিনি।কিন্তু চেহারাটা যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে।রুহুল সাহেববকে জিগ্যাসা করলেন,"কেমন
ছিলে,পথে কোন সমসা হয়নি তো?"
চমকে উঠলাম।খুব পরিচিত একটা কন্ঠ। এবার আর চিনতে ভুল হলো না।
ভালো করে তার দিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠি,'অধরা!'
নিজেকে জোর করে সামলালাম। ভাগ্য আবার আমাকে নিয়ে খেলছে।
রুহুল সাহেব তার স্ত্রীরর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন,"আমার স্ত্রী অধরা শিকদার,আর অধরা দেখো তো ইনাকে চিনো কি না?" অধরার মাথা নিচু।
ও আমার দিকে তাকাতে পারছে না।
আরে ইনি ধ্রুব সাহেব,তোমার প্রিয় লেখক।ধরে এনেছি।এখন তুমিই জানো এটাকে কি করবে!"
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ও আমার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতার হাসি দিলো।
ঠিক বিশ বছর আগের সেই হাসি,বুঝলাম হাসতে ওররপ্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। অভাগা আমি তাও পারলাম না।
ও কখনো এটা আশা করেনি। ঘটনার আকস্মিকতায় ও স্তব্ধ।রুহুল সাহেবরে বললাম,"আমার গাড়ি আসছে, বিদায় তাহলে"
-সে কি গাড়ি আসছে মানে?
না ভাই,তা হবে না।আপনি আজ রাতে থাকবেন আমার বাসায়।
-সে কি করে হয়!আমি হোটেলে রুম বুক করেছি যে!যাই ভাই।
হয়তো দেখা হবে জীবনের কোন এক জংশনে!
রুহুল সাহেবের ছেলেকে আদর করে কোনোমতো ওর সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচলাম।
গাড়ি এসেছিল।লাগেজগুলো পিছনে উঠানোর পর গাড়িতে উঠে বসলাম।
রবীন্দ্র সংগীত বাজছিল টেপরেকর্ডারে।কেন জানি কান্না পাচ্ছিল। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে ওর।
চেহারায় ব্যক্তিত্ব আর বয়সের দৃঢ় ছাপ।সেই নীল শাড়ির অধরা নীল শাড়িতেই কত ভিন্ন!
সময় কত বদলে দেয় মানুষকে। আমি জানি ও এখন কাঁদছে।নীল শাড়ির আঁচল দিয়ে কান্না লুকানোর প্রানপণ চেষ্টা করছে।
ভুলে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিশ বছর পরে দেখা আমাকে। পারবে কি ও?
ধ্রুব অক্ষ
দেয়ালিকা
দেয়ালিকা
- (শেষ রাতের আঁধার)
রিমি যখন কলেজে পড়ে আমি তখন ভার্সিটিতে। রিমির বাসার সামনে নিজের নামে লেখা, "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা সেটে দিয়েছিলাম। এই ভেবে যদি কখনও রিনির গৃহ শিক্ষক দরকার পড়ে, আর আমাকে ফোন করে বলে। রিমির বাসার আশেপাশের সব "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা আমি তুলে ফেলেছিলাম শুধু আমারটা বাদে। এটাও এই ভেবে, অন্তত অন্য কারও সুযোগ না থাকুক। আমি বখাটে ছিলাম না, ছিলাম ভীতু। বখাটে হলে রিমির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রিমির জন্য অপেক্ষা করতাম। রিমি আসলে পিছন পিছন যেতাম, শিস মেরে রিমির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম। পথ আগলিয়ে বাসার ফোন নাম্বার চাইতাম। আমি অমন কিছুই করি নি। অমন কিছু করা আমার দ্বারা সম্ভবও ছিল না। আমি রিমির বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। রিমি বিকালে বারান্দায় এসে দাঁড়ালে গলির দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে রিমিকে দেখতাম। রিমির চোখে চোখ পড়ুক আমি চাইতাম না কখনও। আমার ভালবাসা শুধু জমে ছিল ঐ দোতলার বারান্দা আর এই সরু গলির দেয়ালের আড়ালে। ঐ গলির মাঝে দাঁড়িয়েও নিশ্চিন্তে দেখতে পেতাম রিমিকে ব্যাপারটা তেমন না। খেয়াল রাখতে হত আশেপাশের কেউ আমায় দেখছে কিনা। কেউ গলি গিয়ে চলাচল করছে কিনা। আমি প্রতিদিন এখানে আসি, ব্যাপারটা কেউ অন্য ভাবে নিচ্ছে কিনা। আমি ভীতু ছিলাম, ভীতুদের ঐ ভয় গুলো থাকেই। গলি দিয়ে কেউ গেলে, আমি সোজা হয়ে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করতাম। আমাকে কেউ দেখে ফেললে, কোথাও বাড়ি ভাড়া হবে কিনা তা খোঁজার ভান করে এদিক ওদিক ঘুরতাম।
রিমি বিকালে বড় জোর ঘণ্টা খানেক বারান্দায় দাঁড়াত। আমার মাইনাস পাওয়ারের চশমা দিয়েও স্পষ্ট বোঝা যেত না রিমির চেহারা। তবু মনের টানে, কল্পনায়, রিমির একটা স্পষ্ট মুখচ্ছবি দেখতাম। রিমি চুল মেলে দাঁড়াত, বাতাসে চুল উড়ে মুখে পড়লে তা সরাত, বাতাসে ওড়না একটু নড়ে গেলেই ঠিক করে নিত। আমি মুগ্ধ হয়ে সেসব দেখতাম। ছোট ছোট এই বিষয় গুলোও এতোটা ভাল লাগার ছিল, ভালবাসার ছিল আমি জানতাম শুধু। ভালবাসা এমনই, ভালবাসলে ভালবাসার মানুষের প্রতিটা ছোট ছোট জিনিসের প্রতি, কাজের প্রতি, প্রতিটা অঙ্গভঙ্গির প্রতি ভালবাসা চলে আসে, ভালবাসা যতদিন থাকে তা থাকে, ভালবাসা চলে গেলে এই ভাল লাগাও বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কারও শরীরে বাসা বাঁধে।
আমি প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসি, আমার সাঁটানো দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেলল কিনা। নতুন করে কেউ দেয়ালিকা লাগাল কিনা। আমার নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়াল নিজের দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেললে নতুন করে লাগানো। অন্যের দেয়ালিকা তুলে ফেলা। তবে সেসবে খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। আমার ফোনে কেউ কোনদিন ফোন করে পড়ানোর কথা বলে নি। রিমিকে পড়ানোর ব্যাপারেও না, অন্য কাউকেও না।
সে দিনটায় অবশ্য অন্য রকম কিছু ছিল। আমার ছোট মোবাইল ফোনটায় একটা কল আসল। আমি ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভারী গলার কেউ বলেছিল, আপনি মামুন ?
- জ্বি।
- আপনি কি পুলিশলাইনে বাসার সামনে পড়ানোর জন্য পোস্টার লাগিয়েছেন?
আমি ধুরু ধুরু বুকে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিলাম, জ্বি।
পড়ালেখায় আমার দিন বেশী একটা ভাল যাচ্ছে না। স্কুলের পড়াশুনা আর কলেজের পড়াশুনার মাঝে বিশাল তফাৎ। প্রথম ক্লাস টেস্টের সব গুলোতে ডাব্বা। ব্যাচে স্যারদের কাছে পড়লেও, আমার বুঝতে খুব সমস্যা হয়। কিছু না বুঝলে স্যারদের কাছে জিজ্ঞেস করব সেটাও হয় না। সবাই বুঝছে, আমি একা বুঝছি না, ব্যাপারটা লজ্জার। লজ্জা ভেঙে স্যারদের প্রশ্ন করা হয় না। বাবা মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কোথা থেকে এক গৃহ শিক্ষক যোগাড় করলেন। হাবাগোবা চেহারার গৃহ শিক্ষক। যদিও খুব ভাল পড়ান, তবুও কিছু ব্যাপার আমার কেমন যেন লাগত। আমি "স্যার" বললেই, তিনি এমন ভাবে চমকে উঠতেন, যেন আমি না জানি কি বলেছি। আমার স্যার আমাকে প্রথম দিনই বলেছেন, যদি একটা পড়া একবারে না বুঝো, দুইবার জিজ্ঞেস করবে, দুইবারে না হলে একশ বার। আমি বিরক্ত হব না।
আমার স্যার বিরক্ত হতেন না। তিনি বেশী মাত্রায় ধৈর্যশীল। অতি মাত্রায় লাজুক। একবার অসাবধানতায় আমাকে পড়া বুঝাবার সময়, আমার হাতের সাথে ওনার আঙ্গুলের স্পর্শ হওয়াতে উনি এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, বার বার করে বলছিলেন, সর্যি রিমি, সর্যি আমি। আমি ইচ্ছা করে কাজটা করি নি। আমি বুঝতে পারি নি। প্লিজ তুমি আঙ্কেল আন্টিকে কিছু বোলো না, প্লিজ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম তার আচরণ দেখে, এটা এতো বড় কোন ব্যাপার ছিল না। উনি কাজটা ইচ্ছা করে করেছিলেন তাও না। আমি সবসময় ওনার সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার চেষ্টা করতাম, উনি সবসময় একটা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করতেন। উনি বন্ধু হতেই পারেন, বেশ ভাল একটা বন্ধু। ওনার কারণে আমার পড়ালেখায় ফলাফল ভাল হচ্ছে। আমি যখন ওনাকে বলি, স্যার আপনি না থাকলে আমি ফেল করেই যেতাম, আপনার গল্প আমি সবার কাছে করি।
উনি তখন বলতেন, দেখো, এটা তেমন কিছু না। প্রথম দিকে কলেজে অমন খারাপ ফলাফল সবাই করেই। আমিও করেছিলাম।
আমার তা বিশ্বাস হত না। ওনার পক্ষে খারাপ ফলাফল সম্ভব না। আমাকে ওনার এক কথায় সবসময় আঁতেল বলেই মনে হত। উনি প্রতিদিন পড়ানো শুরু করার আগে, বইয়ের ঘ্রাণ নিতেন অনেকটা সময় ধরে, আঁতেল ছাড়া এসব আর কারও পক্ষে সম্ভব না।
আমি একবার ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ভালবাসার কোন মানুষ আছে স্যার?
উনি ওনার হাতের চায়ের কাপে রাখা চা ফেলে দিয়ে হতচকিয়ে গেলেন। চা মুছতে মুছতে বললেন, পড়ালেখাটা এতো কঠিন না বুঝলে? যখন পড়ালেখাকে ভালবাসবে, তখন দেখবে পড়ালেখাও তোমাকে ভালবাসা শুরু করবে। একটা কিছুর পিছনে লেগে থাকলে তা তোমার হবেই।
উনি সব কিছুই ঘুরে ফিরে পড়ালেখার দিকে নিয়ে যেতেন। এর মধ্যে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা চলে আসল কাছাকাছি। বাবা মা ওনাকে খুব পছন্দ করেন। আমার স্যার আমাকে পড়ানোর পাশাপাশি বি সি এস এর প্রস্তুতি নিতেন। আমার নিজের ফলাফলের প্রতি যতটা না বিশ্বাস ছিল তার চেয়ে বেশী বিশ্বাস ছিল স্যারের বি সি এস হয়ে যাবে।
হয়েছিলও তাই। আমার স্যার এখন ডি সি অফিসের সহকারী কমিশনার। যদিও ঢাকায় থাকেন না, চাকরির খাতিরে গোপালগঞ্জ আছেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ওখানেই আছি। মাঝে একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমার স্যারের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার স্যার 'উনি' থেকে 'ও' হয়ে গেল। প্রেম করে বিয়ে করেছি তেমন না, ও প্রেম করার মত ছেলে না। যে ছেলেকে কাউকে ভালবাসে কিনা জিজ্ঞেস করলে, পড়ালেখায় ভাল ফলাফলের একশ উপায় বলে, তার পক্ষে প্রেমকে সম্ভব করা অসম্ভব। বাবা মেয়ের পছন্দ ছিল, পছন্দ ছিল আমারও। না করেনি আমার স্যারও। এখন সংসার চলছে, আমার মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি আর মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া আমার স্যারটার সাথে।
ভেবেছিলাম আগের পরের অনেক কিছুই লিখব ডায়েরিতে। মোটা ডায়েরি ভরে অনেক কিছু থাকবে, ছোট ছোট অনেক কিছু, আমার কথা, ওর কথা, অনেকের কথা। কিছুই হল না। ডায়েরি লেখা এখানেই সমাপ্ত। অনেক কিছুই লেখা হয় না, চাইলেই লিখে প্রকাশ করা যায় না।
সেদিনের সে ফোন আমার জন্য ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে নি। উল্টা ঝাড়ি খেয়েছি। ফোন দিয়ে কর্কশ গলায় দেয়ালে পোস্টার লাগানোর দায়ে এক লোক এক গাদা ধমক, বকা যাচ্ছে তাই বলে দিল। "দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ" দেখেও কেন পোস্টার লাগালাম সে ব্যাপারে জবাব চাইল। পরবর্তীতে আবার পোস্টার লাগালে পুলিশে দিবে বলে শাসিয়ে দিল। দেয়ালে পোস্টার লাগালে পুলিশে ধরে কিনা, পুলিশে ধরলেও কোর্টে চালান করে কিনা, করলেও দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিচার করতে জর্জ সাহেব উকিলেরা আসে কিনা, এই অপরাধে জেল জরিমানা হয় কিনা আমার জানা ছিল না, শুধু জানা ছিল এই অপরাধ করতে হবে। করাটা জরুরী। এতো অপরাধ করেও না আমি পাচ্ছিলাম কোন শাস্তি, না পাচ্ছিলাম কোন পুরষ্কার। "সবুরে মেওয়া ফলে", আমার মেওয়া কোনভাবেই ফলছিল না। মেওয়া গাছের পিছনে এতো সময়, এতো পরিশ্রম করেও না। আমার ভালবাসা দিনে দিনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, দেয়ালে সাঁটানো দেয়ালিকার প্রিন্টের হরফের মত।
সে ফোনের বহুকাল পরে আমার ফোনে আবার ফোন এসেছিল। কতকাল পরে জানি না। এতো বছরের হিসাব আমি রাখি না। শুধু জানতাম আমি একটা মোহে ছিলাম, সে মোহ কাটছিল না। ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি গলায় বলেছিল, হ্যালো, মিনহাজ বলছেন?
- জ্বি।
- আপনি পড়ানোর জন্য বোধহয় একটা পোস্টার লাগিয়েছিলেন?
- জ্বি, জ্বি।
- আমার মেয়েটা ক্লাস টু তে পড়ে। ওকে পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক খুঁজছিলাম।
ফোনটা করেছিল রিনি। আমার এতদিনের ইচ্ছে, এতো দিনে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রিমি ওর ক্লাস টু তে পড়া মেয়েটাকে পড়াবার জন্য আমাকে ফোন করেছে। রিমির বিয়ে হয়েছে। ওকে যে ছেলেটা পড়াত সেই ছেলেটার সাথেই। ছেলেটার নাম আমি জানি না। যে টুকু জানি ছেলেটা সরকারী চাকরি করে, যে টুকু জানি রিমি ভাল আছে, যে টুকু জানি ওদের একটা মিষ্টি করে মেয়ে আছে। আর যে টুকু জানি আমি ভাল নেই। রিমির বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম, দাওয়াত ছাড়াই গিয়েছিলাম। রিমিকে বিয়ের সাজে আরও সুন্দর লাগছিল সেদিন। তবু সে সুন্দর দেখে আমার বুকের ভিতর জ্বালা করছিল, কোথায় যেন একটা ব্যথা করছিল, আমি সে ব্যথাটা ধরতে পারছিলাম না, ছুঁতে পারছিলাম না, বলতেও পারছিলাম না, "ব্যথা পাবার কিছু নেই। সত্যি কিছু নেই।" রিমির শ্বশুর বাড়ির ঠিকানাও যোগাড় করেছিলাম, অকারণে রিমির শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেরাতাম। রিমি আর ওর স্বামীকে দেখতাম। বেশ মানিয়েছে দুজনকে। আমার মত কাউকে ঠিক মানাতো না। রিমির একটা মেয়ে হল, সে মেয়েটা স্কুলে ভর্তি হল। আবার আমার দেয়ালিকা সাঁটানো শুরু হল। আমি রিমিকে তাও দেখি, মেয়ে নিয়ে স্কুলে যায়, মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। আসা যাওয়ার পথে আমার সাথে কখনও চোখাচোখি হয় না। ও দৃষ্টি আমার দৃষ্টিতে পড়বার জন্য নয়, থমকে থাকার নয়, চমকে গিয়ে আটকে যাবার নয়।
আমি পাস করেছি কোনমতে। বাবা, মা নেই, প্রেমিকা নেই। তাই কেউ চাকরি করার জন্য তাড়াও দেয় নি। চাকরি আমি করিও নি, করিও না। টুকটাক টিউশনিতে চলছে দিন। একদিন সে দিন গুলো থমকে যাবে, চমকে ঠিক আটকে যাবে। সে খবর কেউ রাখবে না, সে খবর কেউ কাউকে দিবেও না।
আমি শেভ করে পরিপাটি হয়ে রিমিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রিমির মেয়েকে পড়াব, আর একটা টিউশনি বাড়ল, বাড়তি কিছু টাকা, আর একটু ভাল ভাবে চলা।
রিমিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেয়ালিকাটা এখনও লেগে আছে দেয়ালের সাথে। সেখানে আমার নাম, মোবাইল নাম্বার, আর পড়াতে চাই আমি সে আকুতি। মানুষ খুব মন থেকে কিছু চাইলে, চেষ্টা করলে, একটা কিছুর সাথে লেগে থাকলে, তা পায়। আমি চেয়েছিলাম আমার দেয়ালিকা পড়ে কেউ আমাকে ফোন করুক, রিমির বাসায় যাবার আমার অনুমতি হোক। আমি তা পেয়েছিও। হয়ত এর বেশী কিছু চাই নি, চেষ্টাও করি নি, তাই পাই নি। আমি এক টানে দেয়ালিকাটা তুলে ফেললাম। আমার চাওয়া পূরণ হয়েছে, পাওয়ার আর কিছুই নেই এই দেয়ালিকা থেকে। মাটিতে দেয়ালিকাটা ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে আসলাম। রিমিদের বাসায় গেলাম না, যাবও না হয়ত। কড়া রোদের মাঝে ছাতা ছাড়া আমি চলতে লাগলাম, দেয়ালিকাটা পিছনে ফেলে। দেয়ালিকাটা একদিন হারিয়ে যাবে, গোপনে খুব গোপনে। ঐ দেয়ালিকার খোঁজ কেউ করবে না। ঐ দেয়ালিকার আবেদন কেউ কখনও বুঝতেও পারে না। খুব সাবধানে সবাই এড়িয়ে চলে। দেয়ালিকার মত কিছু মানুষ সারাজীবন কিছু মোহে আটকে থেকেও কখনও বোঝাতে পারে না, আমি কী চাই, আমার কী দরকার, আসলেই কতটা দরকার। খুব নীরবে সে আবেদন হারিয়ে যায়, মূল্যহীনের তালিকায় নিঃশব্দে যোগ হয়। হৃদয়ের অন্তর্দহনে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কোথাও বাসা বাঁধে না। টুপ করে হারিয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায়।
অক্ষ
যেদিন তুমি পাল্টে গেলে
যেদিন তুমি পাল্টে গেলে
যেদিন হঠাৎ তুমি পাল্টে গেলে
সেদিন থেকে বদলে গেল আমার আকাশ ।
পাল্টে গেল আকাশের রঙ ।
কষ্ট পেল মেঘেদের মন ।
থেমে গেল সব কোলাহল ।
বৃষ্টি নামলো । কষ্টের বৃষ্টি । সুখের বৃষ্টি ।
আমায় ধুয়ে শুদ্ধ করতে বৃষ্টির দলে যেন
প্রতিযোগীতা লেগে গেল ।
কার ও চেষ্টার কোন কমতি ছিল না ।
এরপর, মেঘেদের ক্লান্তি এল । আকাশ আবার নীল হল ।
শুধু নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে রইল
আমার চন্দ্রাহত পৃথিবী ।
আজ থেকে তুমি মুক্ত
আমি তো কখনো তোমায় ছুতে চাইনি ,
চাইনি তোমার পাঁজরে বন্দী হতে,
চাইনি চাঁদনী রাতে তোমার হাত
ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ।
মাঝে মাঝে মন যে চায় না তা না,
তবে তুমি চাইবেনা বলেই আমিও আর চাই নি ।
আমি কখনই চাইনি তোমার
নিঃশ্বাসের কাছে আসতে ।
শুধো চেয়েছি তোমায় একটু ভালবাসতে ।
সে অধিকার থেকে আমায় বঞ্চিত কর না প্লীজ ।
আমি জানি তুমি আমায় ভালবাসবে না ।
তবু দূর থেকে আমি ভালোবেসে যাব ।
মাঝে মাঝে হয়ত খুব ইচ্ছে হবে তোমার সাথে কথা বলতে,
দূর থেকে একটুখানি দেখতে ।
কিন্ত না,
তোমার রঙিন জীবনে আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না ।
আজ থেকে তুমি মুক্ত । ভাল থেকো ।
তোমার কথা মনে পড়ে
প্রতিদিন রাত যায় দিন আসে, রাত আসে রাত বাড়ে
আর রাত যত বাড়তে থাকে ততই তোমার কথা মনে পড়ে
পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে
ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠা তোমার ওই উচ্ছল চেহারা
সেই স্মৃতিগুলো মনে করে আমি হাসি
আর সেই স্মৃতির শেষ দিকের
কথাগুলো মনে করে আমি কাঁদি
রাত বাড়ে, দিন আসে,
আমার দিনগুলো এভাবেই কেটে যায় হায় প্রেম !!
যেদিন হঠাৎ তুমি পাল্টে গেলে
সেদিন থেকে বদলে গেল আমার আকাশ ।
পাল্টে গেল আকাশের রঙ ।
কষ্ট পেল মেঘেদের মন ।
থেমে গেল সব কোলাহল ।
বৃষ্টি নামলো । কষ্টের বৃষ্টি । সুখের বৃষ্টি ।
আমায় ধুয়ে শুদ্ধ করতে বৃষ্টির দলে যেন
প্রতিযোগীতা লেগে গেল ।
কার ও চেষ্টার কোন কমতি ছিল না ।
এরপর, মেঘেদের ক্লান্তি এল । আকাশ আবার নীল হল ।
শুধু নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে রইল
আমার চন্দ্রাহত পৃথিবী ।
আজ থেকে তুমি মুক্ত
আমি তো কখনো তোমায় ছুতে চাইনি ,
চাইনি তোমার পাঁজরে বন্দী হতে,
চাইনি চাঁদনী রাতে তোমার হাত
ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ।
মাঝে মাঝে মন যে চায় না তা না,
তবে তুমি চাইবেনা বলেই আমিও আর চাই নি ।
আমি কখনই চাইনি তোমার
নিঃশ্বাসের কাছে আসতে ।
শুধো চেয়েছি তোমায় একটু ভালবাসতে ।
সে অধিকার থেকে আমায় বঞ্চিত কর না প্লীজ ।
আমি জানি তুমি আমায় ভালবাসবে না ।
তবু দূর থেকে আমি ভালোবেসে যাব ।
মাঝে মাঝে হয়ত খুব ইচ্ছে হবে তোমার সাথে কথা বলতে,
দূর থেকে একটুখানি দেখতে ।
কিন্ত না,
তোমার রঙিন জীবনে আমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না ।
আজ থেকে তুমি মুক্ত । ভাল থেকো ।
তোমার কথা মনে পড়ে
প্রতিদিন রাত যায় দিন আসে, রাত আসে রাত বাড়ে
আর রাত যত বাড়তে থাকে ততই তোমার কথা মনে পড়ে
পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে
ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠা তোমার ওই উচ্ছল চেহারা
সেই স্মৃতিগুলো মনে করে আমি হাসি
আর সেই স্মৃতির শেষ দিকের
কথাগুলো মনে করে আমি কাঁদি
রাত বাড়ে, দিন আসে,
আমার দিনগুলো এভাবেই কেটে যায় হায় প্রেম !!
তুমি এলে ভোরের চাঁদ হয়ে
তুমি এলে ভোরের চাঁদ হয়ে
নিঃসঙ্গ নাবিক
কতরাত তোমার
কথা ভেবে ভেবে কেঁদে কেঁদে কাটালাম ।
এর পর একদিন ভোর হল, তুমি এলে ।
আমি ভাবলাম এরই নাম কি ভোরের চাঁদ ?
উপড়ে তাকালাম , উনার
কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবো ।
জবাবে উনি একটু হাসলেন । তোমার
দিকে তাকালাম ।
তুমিও হাসলে। আমার সব রাত জাগার
কষ্ট এক নিমিষে দূর হয়ে গেল ।
সকালের মিষ্টি রোদ পড়ছিল তোমার
মুখে । আমি ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে রইলাম।
তুমি বললে, “কি ? কি দেখো ?
খালি চেহারা দেখলেই হবে ?
বসতে বলবে না ?”
আমার খুব বলতে ইচ্ছে হলো, ” তোমার
হাতটা একটু ধরি ? সাহস পেলাম না ।”
যদি আবার হাতটা ধরে আবার
প্রেমে পড়ে আবার ভুল করি !?!
” এসো, ভোরের পাখি, তুমি বস
আমার ঘরে
কতকিছু দিবার আছে তোমায় উজাড়
করে । “
নিঃসঙ্গ নাবিক
কতরাত তোমার
কথা ভেবে ভেবে কেঁদে কেঁদে কাটালাম ।
এর পর একদিন ভোর হল, তুমি এলে ।
আমি ভাবলাম এরই নাম কি ভোরের চাঁদ ?
উপড়ে তাকালাম , উনার
কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবো ।
জবাবে উনি একটু হাসলেন । তোমার
দিকে তাকালাম ।
তুমিও হাসলে। আমার সব রাত জাগার
কষ্ট এক নিমিষে দূর হয়ে গেল ।
সকালের মিষ্টি রোদ পড়ছিল তোমার
মুখে । আমি ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে রইলাম।
তুমি বললে, “কি ? কি দেখো ?
খালি চেহারা দেখলেই হবে ?
বসতে বলবে না ?”
আমার খুব বলতে ইচ্ছে হলো, ” তোমার
হাতটা একটু ধরি ? সাহস পেলাম না ।”
যদি আবার হাতটা ধরে আবার
প্রেমে পড়ে আবার ভুল করি !?!
” এসো, ভোরের পাখি, তুমি বস
আমার ঘরে
কতকিছু দিবার আছে তোমায় উজাড়
করে । “
মাঝে মাঝে হয় এমন হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয়
আবদুল্লাহ মামুন ( ধ্রুব অক্ষ )
--------------------------------------------------------------
বাতাসটা একটুকু ভারী হয়ে যায়
ফুসফুসে একটুকু অক্সিজেনের অভাব বোধ হয়
শ্বাস নিতে একটুকু ব্যথা হয় কষ্ট হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
ঘরের বাতি নিভিয়ে দিতে হয়
অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে হয়
দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দিতে হয়
চোখের জলে বালিশ ভেজাতে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
কোনো এক মানবীর কথা ভেবে কাঁদতে হয়
নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়
খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে হয়
শত শত তারকার মাঝে হারিয়ে যেতে হয়
নিঃসঙ্গ দুঃখী শুকতারার ডাকে সারা দিতে হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।
সবকিছু ভুলে যেতে হয় ভুলে থাকতে হয়
বন্ধনমুক্ত বন্ধনহীন হতে হয়
নিয়ন্ত্রন হারাতে হয় ঢিলা হতে হয়
বুক চিরে চিত্কার করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।,
আকাশ পাহাড় সাগর নদী বৃক্ষ হতে ইচ্ছে হয়
মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
শূণ্যতায় মিশে যেতে ইচ্ছে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয়।
তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয়
তোমার বুকে মাথা রাখতে ইচ্ছে হয়
তোমার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হয়
এক হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
আকাশের মেঘ হতে ইচ্ছে হয়
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে ইচ্ছে হয়
রংধনু হয়ে আকাশ রঙিন করতে ইচ্ছে হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।
আবদুল্লাহ মামুন ( ধ্রুব অক্ষ )
--------------------------------------------------------------
বাতাসটা একটুকু ভারী হয়ে যায়
ফুসফুসে একটুকু অক্সিজেনের অভাব বোধ হয়
শ্বাস নিতে একটুকু ব্যথা হয় কষ্ট হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
ঘরের বাতি নিভিয়ে দিতে হয়
অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে হয়
দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দিতে হয়
চোখের জলে বালিশ ভেজাতে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
কোনো এক মানবীর কথা ভেবে কাঁদতে হয়
নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়
খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে হয়
শত শত তারকার মাঝে হারিয়ে যেতে হয়
নিঃসঙ্গ দুঃখী শুকতারার ডাকে সারা দিতে হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।
সবকিছু ভুলে যেতে হয় ভুলে থাকতে হয়
বন্ধনমুক্ত বন্ধনহীন হতে হয়
নিয়ন্ত্রন হারাতে হয় ঢিলা হতে হয়
বুক চিরে চিত্কার করে কাঁদতে ইচ্ছা হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।,
আকাশ পাহাড় সাগর নদী বৃক্ষ হতে ইচ্ছে হয়
মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
শূণ্যতায় মিশে যেতে ইচ্ছে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয়।
তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয়
তোমার বুকে মাথা রাখতে ইচ্ছে হয়
তোমার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হয়
এক হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়
মাঝে মাঝে হয় এমন হয় ।,
আকাশের মেঘ হতে ইচ্ছে হয়
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে ইচ্ছে হয়
রংধনু হয়ে আকাশ রঙিন করতে ইচ্ছে হয়
হয় মাঝে মাঝে এমন হয় ।
শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট
__________ শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট
_______________ ধ্রুব অক্ষ
-------------------------------------------------------
তোমার হাতে যখন অন্য পুরুষের হাত,
তুমি-সে দুজনে একসাথ
-তখন আমি ঈর্ষান্বিত।
মনে হয় বেঁচেও যেন মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
*
*
তুমি যখন অন্য পুরুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ,
চোখের চাঞ্চল্যে প্রকাশ পায় তোমার সুখ
- তখন আমি লজ্জিত।
মনে হয় বেঁচে থেকেও মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
*
*
যখন অন্য পুরুষের সাথে তুমি কথা বল অবিরত,
তোমার হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় ভালো লাগা শত
- তখন আমি ব্যাথিত।
মনে হয় বেঁচে থেকেও মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
_______________ ধ্রুব অক্ষ
-------------------------------------------------------
তোমার হাতে যখন অন্য পুরুষের হাত,
তুমি-সে দুজনে একসাথ
-তখন আমি ঈর্ষান্বিত।
মনে হয় বেঁচেও যেন মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
*
*
তুমি যখন অন্য পুরুষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ,
চোখের চাঞ্চল্যে প্রকাশ পায় তোমার সুখ
- তখন আমি লজ্জিত।
মনে হয় বেঁচে থেকেও মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
*
*
যখন অন্য পুরুষের সাথে তুমি কথা বল অবিরত,
তোমার হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় ভালো লাগা শত
- তখন আমি ব্যাথিত।
মনে হয় বেঁচে থেকেও মৃত।
হৃদয়ে অচেনা বেদনা হয় সৃষ্ট,
আর আমার শুণ্য হাতে হাত রাখে কষ্ট।
ভালোবাসার ইশতেহার
_______ ভালোবাসার ইশতেহার
_____________ ধ্রুবঅক্ষ
------------------------------------------------------------------
তোমার তোমাকে ছুঁতে আমি হন্যে হয়ে ফিরি
এ বিশ্বভুমণ্ডলের কত নির্জন রাতে ,
আমি এখনও কত নক্ষত্রের রাতে
উদ্ভ্রান্ত হয়ে যাই
বেঁচে দেই কত জোছনারাত
আমার বুক চিরে ।
যেভাবে আসলে কাছে আসা যায়
আমি ততটুক কাছে আসি ,
তপ্ত হৃদয়ের নীললোহিত ভালোবাসার
ইশতেহার নিয়ে ।
তোমার দেয়া দুঃখের সমাবেশ
উদ্গরিত কষ্টকে ভালোবেসে
কত বিচিত্র নিঃসঙ্গতার রাত
আমি বিনির্মাণ করি ।
আগুনমুখো নদীর বুক চিরে
যে মাঝি ডুবে যায় গভীর জলে
তার বিশ্বাসের স্রোতে ,
সেভাবে ঠিক আমি ডুবে যাই
তোমার মোহের অসুখে ।
তোমার নিকটে আমি কতবার
পরাজিত হই
কতবার অন্ধকার রাতের গ্লাসে
মুখ ডুবাই ,
তবু এক বিচিত্র ভালোবাসার অসুখে
তোমাকে ভালোবাসার ইশতেহার
বুকে নিয়ে ঘুরি ।
_____________ ধ্রুবঅক্ষ
------------------------------------------------------------------
তোমার তোমাকে ছুঁতে আমি হন্যে হয়ে ফিরি
এ বিশ্বভুমণ্ডলের কত নির্জন রাতে ,
আমি এখনও কত নক্ষত্রের রাতে
উদ্ভ্রান্ত হয়ে যাই
বেঁচে দেই কত জোছনারাত
আমার বুক চিরে ।
যেভাবে আসলে কাছে আসা যায়
আমি ততটুক কাছে আসি ,
তপ্ত হৃদয়ের নীললোহিত ভালোবাসার
ইশতেহার নিয়ে ।
তোমার দেয়া দুঃখের সমাবেশ
উদ্গরিত কষ্টকে ভালোবেসে
কত বিচিত্র নিঃসঙ্গতার রাত
আমি বিনির্মাণ করি ।
আগুনমুখো নদীর বুক চিরে
যে মাঝি ডুবে যায় গভীর জলে
তার বিশ্বাসের স্রোতে ,
সেভাবে ঠিক আমি ডুবে যাই
তোমার মোহের অসুখে ।
তোমার নিকটে আমি কতবার
পরাজিত হই
কতবার অন্ধকার রাতের গ্লাসে
মুখ ডুবাই ,
তবু এক বিচিত্র ভালোবাসার অসুখে
তোমাকে ভালোবাসার ইশতেহার
বুকে নিয়ে ঘুরি ।
*****প্রতারিত সুখী****
*****প্রতারিত সুখী*****
মামুন আব্দুল্লাহ (ধ্রুব অক্ষ)
====================================
বাতাসের সুবিশাল বাধা পেরিয়ে
আজ আমি নির্বোধ সুখী।
অস্পৃশ্য হৃদয়ের করুন আর্তি
আন্দোলিত হয় কষ্টময় আবেগে
জীবনের অদৃশ্য হাতে আজ
পাওয়া না পাওয়ার ব্যর্থ হিসাব -
ভারসাম্যের বৃথা চেষ্টা !
মিথ্যে ছায়ায় আমার ভালোবাসা
মিথ্যে মায়ায় আমার অহংকার।
আর তার স্পর্শে আমার ধ্বংস,
আমার অহমের (ক্ষমাহীন) অপমান।
ব্যাঙ্গের অট্টহাসি পরম আত্মার
“তুমি ভুল, তুমি ব্যর্থ,
বোধহীন এক নিকৃষ্ট সত্ত্বা।
মায়াময় ছায়ায় বন্দী তুমি।”
আর আমার ভালোবাসার আবর্তনে
আমি আজ রক্তাক্ত সুখী।
চেনা দুঃখের মাঝে আমার আকাঙ্খা
বিলীন হয় ছায়ার স্পর্শে।
আমি বলি, “আমি সুখী”।
এভাবেই প্রতারিত করি নিজেকে -
প্রতিনিয়ত।
সত্য বড় নিষ্ঠুর হয়ে এসে দাঁড়ায় -
আমার ছেঁড়া আকাশে।
অদৃশ্য ছায়ার অলীক বিশ্বাসে,
মিথ্যে আলিঙ্গনের আর্দ্র ধুম্রজালে -
আমি আজ প্রতারিত সুখী।
মামুন আব্দুল্লাহ (ধ্রুব অক্ষ)
====================================
বাতাসের সুবিশাল বাধা পেরিয়ে
আজ আমি নির্বোধ সুখী।
অস্পৃশ্য হৃদয়ের করুন আর্তি
আন্দোলিত হয় কষ্টময় আবেগে
জীবনের অদৃশ্য হাতে আজ
পাওয়া না পাওয়ার ব্যর্থ হিসাব -
ভারসাম্যের বৃথা চেষ্টা !
মিথ্যে ছায়ায় আমার ভালোবাসা
মিথ্যে মায়ায় আমার অহংকার।
আর তার স্পর্শে আমার ধ্বংস,
আমার অহমের (ক্ষমাহীন) অপমান।
ব্যাঙ্গের অট্টহাসি পরম আত্মার
“তুমি ভুল, তুমি ব্যর্থ,
বোধহীন এক নিকৃষ্ট সত্ত্বা।
মায়াময় ছায়ায় বন্দী তুমি।”
আর আমার ভালোবাসার আবর্তনে
আমি আজ রক্তাক্ত সুখী।
চেনা দুঃখের মাঝে আমার আকাঙ্খা
বিলীন হয় ছায়ার স্পর্শে।
আমি বলি, “আমি সুখী”।
এভাবেই প্রতারিত করি নিজেকে -
প্রতিনিয়ত।
সত্য বড় নিষ্ঠুর হয়ে এসে দাঁড়ায় -
আমার ছেঁড়া আকাশে।
অদৃশ্য ছায়ার অলীক বিশ্বাসে,
মিথ্যে আলিঙ্গনের আর্দ্র ধুম্রজালে -
আমি আজ প্রতারিত সুখী।
অস্থির সঙ্কল্পতা
____________ অস্থির সঙ্কল্পতা
_________ আবদুল্লাহ মামুন (ধ্রুব অক্ষ)
========================================
ভালোবাসা শব্দটার সাথে প্রথম যেদিন পরিচয় ঘটল,
সেদিন থেকে আমি ভালোবাসা জমাচ্ছি।
ভালোবাসা জমাচ্ছি ই আর স্বপ্ন দেখছি।
আমি ভালোবাসা জমাচ্ছি সেই অনাগত মানুষটির জন্য,
যার নিস্কলংক স্পর্শে, অঝোর ধারায় বূষ্টি নামবে,
চৈত্রের রোদে দগ্ধ হওয়া ভালোবাসার কাঙ্গাল,
আমার হৃদয় বেদীতে।
যার চুলের আড়ালে মুখ লুকিয়ে নিশ্চিন্তে কেটে যাবে রাত।
যার ভালোবাসা জড়ানো লাজুক দূর্ষ্টি কখনও ফিকে হবে না।
যার নুপুর পরা নিস্পাপ পা দুখানা দেখতে দেখতে,
ডানা মেলব স্বপ্নসুখের দেশে।
তার পরিপাটি করে বাঁধা চুলগুলোর মত,
আমার অগোছালো জীবনটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গুছিয়ে দিবে,
আমাকে মিষ্টি শাষণে জীবন শেখাবে।
আমি সেই মায়াবী পরীর জন্য ভালোবাসা জমাচ্ছি।.
চাঁদ যেমন সারাটা দিন ধরে রাতের জন্য ভালবাসা জমায়,
আর দিন শেষে সে শুভ্র ভালোবাসার নিস্পাপ অঞ্জলী,
উজাড় করে ঢেলে দেয় রাতের বুকে।
আমিও তেমনি ভালোবাসা জমাই, আমার সেই মানুষটির জন্যে।
যে আমাকে ভালোবেসে, তার ওড়না দিয়ে,
আমার ঘাম মুছিয়ে দিবে, আমাকে বাঁচতে শেখাবে।
মাটিকে ভালোবেসে মেঘপুঞ্জ তার জমানো পানি,
ঝম ঝম করে আছড়ে ফ্যালে মাটির বুকে।
আমি সেই মেঘমালার সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসা জমাচ্ছি।
মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই অবুঝ মনটা
চিৎকার করে জানতে চায় ,
এত কষ্টে জমানো, আজন্ম লালিত ভালোবাসা,
এই ছোট্র জীবনে তাকে দিয়ে যেতে পারব তো !!
_________ আবদুল্লাহ মামুন (ধ্রুব অক্ষ)
========================================
ভালোবাসা শব্দটার সাথে প্রথম যেদিন পরিচয় ঘটল,
সেদিন থেকে আমি ভালোবাসা জমাচ্ছি।
ভালোবাসা জমাচ্ছি ই আর স্বপ্ন দেখছি।
আমি ভালোবাসা জমাচ্ছি সেই অনাগত মানুষটির জন্য,
যার নিস্কলংক স্পর্শে, অঝোর ধারায় বূষ্টি নামবে,
চৈত্রের রোদে দগ্ধ হওয়া ভালোবাসার কাঙ্গাল,
আমার হৃদয় বেদীতে।
যার চুলের আড়ালে মুখ লুকিয়ে নিশ্চিন্তে কেটে যাবে রাত।
যার ভালোবাসা জড়ানো লাজুক দূর্ষ্টি কখনও ফিকে হবে না।
যার নুপুর পরা নিস্পাপ পা দুখানা দেখতে দেখতে,
ডানা মেলব স্বপ্নসুখের দেশে।
তার পরিপাটি করে বাঁধা চুলগুলোর মত,
আমার অগোছালো জীবনটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গুছিয়ে দিবে,
আমাকে মিষ্টি শাষণে জীবন শেখাবে।
আমি সেই মায়াবী পরীর জন্য ভালোবাসা জমাচ্ছি।.
চাঁদ যেমন সারাটা দিন ধরে রাতের জন্য ভালবাসা জমায়,
আর দিন শেষে সে শুভ্র ভালোবাসার নিস্পাপ অঞ্জলী,
উজাড় করে ঢেলে দেয় রাতের বুকে।
আমিও তেমনি ভালোবাসা জমাই, আমার সেই মানুষটির জন্যে।
যে আমাকে ভালোবেসে, তার ওড়না দিয়ে,
আমার ঘাম মুছিয়ে দিবে, আমাকে বাঁচতে শেখাবে।
মাটিকে ভালোবেসে মেঘপুঞ্জ তার জমানো পানি,
ঝম ঝম করে আছড়ে ফ্যালে মাটির বুকে।
আমি সেই মেঘমালার সাথে পাল্লা দিয়ে ভালোবাসা জমাচ্ছি।
মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই অবুঝ মনটা
চিৎকার করে জানতে চায় ,
এত কষ্টে জমানো, আজন্ম লালিত ভালোবাসা,
এই ছোট্র জীবনে তাকে দিয়ে যেতে পারব তো !!
অসমাপ্ত উপন্যাস
অসমাপ্ত উপন্যাস
ধ্রুব অক্ষ
=================================================
আমি কাছাকাছি এসেছিলাম
তুমি যেখানে শুন্য বেছে নিয়েছিলে চাঁদের স্পর্শ ছেড়ে ,
যেখানে মেঘ ভিড় করেছিল মায়াবী কান্নার হিম জলস্রোত
বন্দী করে
আমার শুধু একটাই প্রশ্ন করার ছিল ,
তোমার আর্দ্র চোখে আমার উপস্থিতি কোথায় ?
নাকি মায়াবী বিভ্রমে ধুলিস্নাত হয়েছে
আমার ভালোবাসার জন্মলগ্ন স্থায়িত্ব
দুরন্ত চাঁদ ছুঁয়ে আসা জোছনায়
আমার হৃদপিন্ডের স্পন্দন
তোমার পাঁচ আঙুলে বন্দী মুঠোফোন ছুঁয়ে
তোমার কানে কি পৌঁছায় ?
নাকি সব আমার শুধু প্রেম,
তোমাকে ঘিরে অদ্ভুত জোছনালোকে হাঁটা ,
নিজেকে অন্তর্দাহে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা
সাথে সুখ পাওয়া
আমি নিছুক কোন উপন্যাসের পাতার
প্রেমিকের রোল করছিনা
যে উপন্যাসটা পড়া শেষ হয়ে গেলে
আমার প্রেম মরে যাবে
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ?
বাইরে অদ্ভুত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে
জোছনা শেষে ,
আমি একা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা ।
আমার ভেতরের মনটা তোমাকে খুব করে মনে করছে ।
ধ্রুব অক্ষ
=================================================
আমি কাছাকাছি এসেছিলাম
তুমি যেখানে শুন্য বেছে নিয়েছিলে চাঁদের স্পর্শ ছেড়ে ,
যেখানে মেঘ ভিড় করেছিল মায়াবী কান্নার হিম জলস্রোত
বন্দী করে
আমার শুধু একটাই প্রশ্ন করার ছিল ,
তোমার আর্দ্র চোখে আমার উপস্থিতি কোথায় ?
নাকি মায়াবী বিভ্রমে ধুলিস্নাত হয়েছে
আমার ভালোবাসার জন্মলগ্ন স্থায়িত্ব
দুরন্ত চাঁদ ছুঁয়ে আসা জোছনায়
আমার হৃদপিন্ডের স্পন্দন
তোমার পাঁচ আঙুলে বন্দী মুঠোফোন ছুঁয়ে
তোমার কানে কি পৌঁছায় ?
নাকি সব আমার শুধু প্রেম,
তোমাকে ঘিরে অদ্ভুত জোছনালোকে হাঁটা ,
নিজেকে অন্তর্দাহে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা
সাথে সুখ পাওয়া
আমি নিছুক কোন উপন্যাসের পাতার
প্রেমিকের রোল করছিনা
যে উপন্যাসটা পড়া শেষ হয়ে গেলে
আমার প্রেম মরে যাবে
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ?
বাইরে অদ্ভুত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে
জোছনা শেষে ,
আমি একা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা ।
আমার ভেতরের মনটা তোমাকে খুব করে মনে করছে ।
অসুখ
""অসুখ,,
বুকের তলায় রক্ত ঝরছে রাতদিন,
ডাক্তার বলল,হৃদয় তোমার অনেক মজবুত।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম,আবার জিজ্ঞেস করলাম
"কোন দাগ,কালশীটে,বেরিয়ে আসা নীল ধমনী?''
একটা মোটা গ...ম্ভীর স্বর শুধু শোনা যায়, না, নেই।
তবে! তবে কি? তবে যে আমার হৃদয় ছিন্ন হওয়ার শব্দ শুনি সারাদিন?
সারাদিন তির তির করে রক্ত ঝরার শব্দে আমি যে দিশেহারা?
"বাড়ি যাও,ঘুমিয়ে পড়''। আবার সেই একঘেয়ে ঘড় ঘড় শব্দ।
হ্যাঁ,মনে পড়ে গেল,আমার একটি বাড়ি ছিল।
কবে কোন বালু চড়ায় আটকে আমি আমার উঠান হারিয়েছি,
ডাক্তার বলল,হৃদয় তোমার অনেক মজবুত।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম,আবার জিজ্ঞেস করলাম
"কোন দাগ,কালশীটে,বেরিয়ে আসা নীল ধমনী?''
একটা মোটা গ...ম্ভীর স্বর শুধু শোনা যায়, না, নেই।
তবে! তবে কি? তবে যে আমার হৃদয় ছিন্ন হওয়ার শব্দ শুনি সারাদিন?
সারাদিন তির তির করে রক্ত ঝরার শব্দে আমি যে দিশেহারা?
"বাড়ি যাও,ঘুমিয়ে পড়''। আবার সেই একঘেয়ে ঘড় ঘড় শব্দ।
হ্যাঁ,মনে পড়ে গেল,আমার একটি বাড়ি ছিল।
কবে কোন বালু চড়ায় আটকে আমি আমার উঠান হারিয়েছি,
লাল কাঠালপাতা হারিয়েছি,পেয়ারা গাছের কাঠবিড়ালী হারিয়েছি।
ছোট্ট তিতির- যাকে নিয়ে আমার রাজ্যের কথা- সেও আমাকে ছেড়েছে।
মনে পড়ে, অনেক অনেক যুগ আগে একদিন বেঁচে ছিলাম আমি।
একদিন বেঁচে ছিলাম আমি।
ছোট্ট তিতির- যাকে নিয়ে আমার রাজ্যের কথা- সেও আমাকে ছেড়েছে।
মনে পড়ে, অনেক অনেক যুগ আগে একদিন বেঁচে ছিলাম আমি।
একদিন বেঁচে ছিলাম আমি।
Subscribe to:
Posts (Atom)
HINDI PROPOSE SHAYARI SMS
HINDI PROPOSE SHAYARI Dil ye mera Tumse Pyar karna chahta hai, Apni Mohabbat ka izhaar karna chahta hai, Dekha hai jab se Tumhe aey me...
-
পরকিয়া প্রেম - প্রহেলিকা প্রহেলিকা, প্রহেলি, প্রাণ পাখি, জান, জানু পাখি, কলিজা, জানু, জানু, কই , কই , তুমি কই , কই জানু পাখি, জানু আমার ,...
-
Lovesick_Psycho -অক্ষ --------------- --------------- -------------- মেয়েটার নগ্ন দেহটা পড়ে আছে । স্তন দুটো থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে । ওষ্...
-
আমায় মৃত্যু দে আর কিছুনা শুধু ওই ঠোঁটটা আমাকে দে তোর সময় আর সময়ের ফাঁকে থাকা টুকরো মুহুর্তটা আমায় দে। আর যদি কিছু নিতে হয় তবে আমার তৃ...