Showing posts with label গল্প. Show all posts
Showing posts with label গল্প. Show all posts

the Game of Love part 2

Lovesick_Psycho-অক্ষ
--------------------------------------------
মেয়েটার নগ্ন দেহটা পড়ে আছে । স্তন
দুটো থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে ।
ওষ্ঠ -অধর কেটে নেয়ার ফলে দাঁত গুলো
বের হয়ে আছে , কঙ্কালের দাঁতের মত
কুৎসিত লাগছে ।
ডান হাতের আঙ্গুল গুলো কেটে
নেয়ার ফলে হাতটা দেখাচ্ছে
কলাবিহিন কাঁদির মত ।
তবে একজোরা নিস্পাপ ছলনাভরা
চোখ এখন ও মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে
চেয়ে আছে খুনিটার দিকে ।
বাঁচার জন্য বা অন্য কিছু বলার চেষ্টা
করছে মেয়েটা । গলায় নাইফের
আরেকটা আঘাতে চিরদিনের জন্য
নিথর হয়ে গেল দেহটা ।
খুনিটা এবার সুনিপন ভাবে চোখ দুটো
উঠিয়ে নিল । তারপর রেখে দিল তার
পোলিও টিকার বক্সে ।
***
ভয়ানক স্বপ্নটা প্রতিদিনের মত আবার ও
একবার দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল অক্ষের ।
সারা শরীর ভিজে গেসে ঘামে ।
খনিকের মধ্যে চোখ দুটো লাল বর্ণ
ধারন করেছে । ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা
পানি বের করে কিছুটা পান করলো
অক্ষ ।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায়
গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে
লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে
একরাশ ধোয়া ছেড়ে আরাম কেদারায়
বসে পড়লো ।
অক্ষ এখন আর ভাবতে চায় না ভয়ানক
স্বপ্নটা নিয়ে ।
***
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভয়ানক স্বপ্নটা বার
বার মাথাই চলে আসতেছে । কিছুতেই
ভুলা সম্ভব না । যদিও বা অন্য কিছু
চিন্তা করে ভুলিয়ে দেয় ।
পরদিন আবার সেই স্বপ্নটা দেখে ।
কিছুদিন আগে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট
এর কাছে গিয়ে ছিল অক্ষ । কিন্তু কোন
লাভ হয়নি ।
বেচারা সাইকিয়াট্রিস্ট কোন
ব্যাখ্যা দিতে পারেনি । উল্টো যখন
বলছিল এসব অক্ষের হ্যালুজিনেশন ।
অক্ষ সে দিন রাতেই সাইকিয়াট্রিস্ট
সাহেবকে তার বাসাই গিয়ে হাত
পায়ের রগ গুলো কেটে সিলিং ফ্যান
এর সাথে টাংঙ্গিয়ে দিয়ে ছিল ।
সাইকিয়াট্রিস্ট সাহেব মনে হয়
ব্যাপারটা হ্যালুজিনেশন মনে করে
প্রথমে । তারপর কিছুক্ষণ ছটফট করে
চিরদিন এর জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় ।
পরদিন পুলিশ তার বাসা থেকে লাশ
উদ্ধার করে ।
***
সিগারেট পুড়ে শেষ হওয়ার ফলে অক্ষ
হাতে ছ্যাকা অনুভব করে । ভাবনার
জগত থেকে ফিরে আসে অক্ষ ।
আবারও অক্ষ স্বাভাবিক ভাবে সব কিছু
ভুলে যাবার চেষ্টা করে । কারন একজন
সিরিয়াল কিলার যদি এসব ভাবে
তাহলে বেশি দিন তার প্রফেশন
টিকে থাকবে না ।
যদি কোন সিরিয়াল কিলার এসব
নিয়ে যত বেশি ভাবে সে তত
তারাতারি পাগলে পরিনত হবে ।অক্ষ
এ সম্পর্কে ভাল মতই জানে ।
ক্রিমিনালজম উপর অক্ষ অসামান্য
জ্ঞান অর্জন করেছে । তাই প্রত্যেকটা
খুনই সূক্ষ্ম ভাবে করতে পারে ।
আবারও ভয়ঙ্কর স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে
গেল অক্ষের । স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে
ভাবতে পুরনো দিনগুলিতে ফিরে গেল
অক্ষ...............।।
...........................।।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে অক্ষ
বিবিএ পড়ে,সব কিছু থাকা সত্ত্বেও
পারিবারিক কারনে সব সময় প্রচুর
ডিপ্রেশনে
থাকে সব সময় । অক্ষকে একা আর
নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে নিয়েছিল
একেবারে। সে তার নিঃসঙ্গতা পূর্ণ
দিনগুলোর সময়
ফেসবুক নিয়েই পার করছিল । হঠাৎ একটি
মেয়ে এসে অক্ষের জীবনকে পুরোপুরি
ওলট-পালট করে দেয় ।
*****
অক্ষ একদিন ফেসবুকে একটা মেয়ে
বিদ্বেষী গল্প পোস্ট দেয় সেখানে
একটি মেয়ে কমেন্ট করে আমি মেয়ে
হয়েও আপনার সাথে একমত ।
তারপর সেখান থেকেই তাদের মাঝে
পরিচয় হয়ে যায় ,সেখান থেকে বন্ধুত্ব ।
এরপর প্রতিদিন মেয়েটি অক্ষের ওপর
কর্তৃত্ব ফলাতে চেষ্টা করত । ধীরে
ধীরে মেয়েটির প্রতি অক্ষ দুর্বলতা
অনুভব করে ।
এক সময় সম্পর্কটা ভালোবাসার রুপ নেয় ।
এশার ভালোবাসা পেয়ে অক্ষ আর
নিজেকে একা অনুভব করতনা ।
অনেকটা নিঃসঙ্গতা কমে
গিয়েছিলো । শুরু হয় এক সাথে পথচলা ।
****
কিছু দিন যেতে না যেতেই এশা বদলে
যায় । অক্ষ কে কেমন যেন দূরে ঠেলে
দেয় । ফোন ফেসবুক শুরু করে সব খানে
এশা অক্ষ কে এভয়েড করতো ।
(তারপরেও বহুটানা পোড়নের মাঝেও
সম্পর্কটা ১৮ মাস টিকে থাকে । এর
মাঝে তাদের কয়েকবার দেখাও
হয়েছে )
কিন্তু এশা HSC Exam এর শুরু থেকে
অক্ষের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়
তারপর আবার আস্তে আস্তে পুরাদমে
এভয়েড করা শুরু করে ।
ফোন দিলে রিসিভ করত না, sms দিলে
reply করতনা, করলেও নানান
টালবাহানা করত অক্ষকে
অকারনেইনানা ভাবে রাগ দেখাত ।
একসময় অক্ষ জানতে পারে এশা অন্য
আরেকটা ছেলের সাথে রিলেশন করে
আর সেই রিলেশন সে ২ বছর ধরেই করে
আসছে অক্ষের অন্ধ ভালোবাসার
সুযোগ নিয়ে ।
কারন অক্ষ থাকত অনেক দূরে তাই অক্ষ
এশাকে অনেকটা বিশ্বাস করত । এসময়
এশা এক সাথে কয়েকটা রিলেশন
চালিয়ে গেসে প্লে গার্লের মত ।
****
এদিকে আবার শুরু হয় অক্ষের কষ্টময় একা
নিঃসঙ্গ পথচলা । মানষিক দিক দিয়ে
অক্ষ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে । এশার সৃতি
গুলো অক্ষ কে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিত ।
অনেক বার পৃথিবী থেকে বিদায়
নিতে চেষ্টা করে কিন্ত অক্ষ
পারেনি । আর এই নিঃসঙ্গতা আর
একাকীত্ব এক সময় আক্রোশের জন্ম নেয় ।
জেদ আর প্রচণ্ড ঘৃণার বশে তার
কয়েকদিন পরেই একরাতে নিঃসংশ
ভাবে এশা কে খুন করে আসে ।
এশাকে খুন করার পর থেকে অক্ষ
পুরোপুরি PSYCHO হয়ে যায় । এরপর থেকে
কোন মেয়েকে অক্ষের সহ্য হয়না ।
অহেতুক কারনে অক্ষ মেয়েদের খুন করে

মাঝে মাঝে বড় ধরনের কন্টাক
কিলিং করে । তবে ভিক্টিম শুধু মেয়ে
ই হতে হবে । বিশেষ করে এশার মত
ছলনাময়ী মেয়েদের খুন করে অদ্ভুদ
রকমের পৈশাচিক আনন্দ পায় অক্ষ ।
***
প্রতিদিনের মত আজও অক্ষ ঘুমের মধ্যে
সেই ভয়ানক স্বপ্নটা দেখতে ছিলো ।
ফোনের অ্যালার্ম এর শব্দে ঘুমটা
ভেঙে যায় । সারা শরীর ঘামে
ভিজে গেছে ।
অক্ষ এখনো ডাইরির পাশে টেবিলের
উপর সযত্নে রাখা এশার নিষ্পাপ
চোখজোরা দেখতে পাচ্ছে ।
ছলনাময়ীর চোখদুটো অসম্ভব মায়া ভরা
দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অক্ষের
দিকে । হা হা হা ..................

পরকীয়া প্রেম - প্রহেলিকা

পরকিয়া প্রেম -  প্রহেলিকা

প্রহেলিকা, প্রহেলি, প্রাণ পাখি, জান, জানু পাখি, কলিজা, জানু, জানু, কই , কই , তুমি কই , কই জানু পাখি, জানু আমার ,
কলিজা আমার , পাখী আমার, ভালোবাসা আমার , হৃদয় আমার , পরান আমার, জানুরে, ও জান..........আসো তাড়াতাড়ি আসো।
যেওনা , প্লিজ।

মনের মাঝে খুব অসস্থি। দারুন অপরাধবোধ কাজ করছে। এই পাপবোধের জন্য মনে হয় ঘুম আসছেনা ।
রাত নিশি হচ্ছে ক্রমশঃ। কিন্তু কীসের যেন এক দূর্নিবার নিষিদ্ধ আকর্ষণ আমাকে টানছে।

আমার চোখ আটকে আছে ফেসবুকের পাতায়।
ম্যাসেজের দিকে চেয়ে আছি। "হ্যালো প্রহেলিকা" , আর কতক্ষণ বসে থাকবো?
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর লিখলাম- হ্যালো।

তুমি এতো দেরীতে রিপ্লাই দাও ভালো লাগেনা। জানোনা, ওয়েটিং ইজ সোর, প্রিয়  প্রহেলিকা । প্রিয়  প্রহেলি। তোমার জামাই কই? এখনো ঘুমায় নাই?

জ্বি,পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে।

তোমার কি মন খারাপ? এতো দেরী করে রিপ্লাই দাও কেন? মন মানে না,জানু পাখী। তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও ভালো লাগেনা। আমার সারাক্ষণ শুধু তোমার নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করে।

আমি ধীরে ধীরে লিখলাম-শুধুই কি ডাকতে ইচ্ছে করে? আর কিছু না।
কি ডাকতে ইচ্ছে করে?
জানু, জানু পাখি, জানু , জানুপাখি, জানু , জানুপাখী, জানু, জানুপাখী।সারাক্ষণ শুধু ডাকতে ইচ্ছে করে প্রিয় প্রহেলিকা। কিন্তু তারপরও যে আমার তৃষ্না মিটেনা।

তোমার তৃষ্না মিটে কীসে?
তুমি জানোনা, কীসে তৃষ্নামিটে। তোমাকে কতগুলো চুমু খেয়েছি জানো। মোট ৭৯১ টা। তারপরও তৃষ্না মিটেনা।
প্রতিটি চুমুর পর নতুন করে তৃষ্না জাগে। প্রতিটি চুমুই মনে হয় নতুন। এভরি লাস্ট কিস ইজ ফার্স্ট কিস।

বাহবা। প্রতিটি চুমু তুমি গুনে রেখেছো। এতো ভালোবাসো?

শুধুই কি চুমু গুনে রেখেছি। ছোট অভিসার, বড় অভিসার, গভীর অভিসার। শুকনো, ভেজা সব গুনে রেখেছি। তোমার সবচেয়ে সুন্দর কি জানো?
কি?
পামেলা এন্ডারসান ফেইল। এতো নিঁখুত । ২১টা চুমু খাওয়ার পর যার স্পর্শ পেয়েছিলাম।
আফটার ২১ কিসেস দ্যান ইউ এ্যালাউড মি আনলিমিটেড এ্যাকসেস টু ইউর বুবস।

তাই নাকি? সব হিসাব করে রেখেছো।

হুম। তুমিই বলেছিলে। ঐ টাই নাকি পারফেক্ট লাভার।

তাই নাকি? আর ভেজা অভিসার কোনটা ?বলতো শুনি।
মুখে বলতে পারবোনা, কাছে আসো ।ওফ.....জান। জানোপাখি। জানোরে...

আরে বলোনা শুনি। শুনতে ভালো লাগছে।


এমন সময় পাশের রুমে শব্দ হলো। আমি তাড়াতাড়ি টেবিল লাইট অফ করে বাথরুমে গেলাম। এসে দেখি না ও ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমের ঔষধ কাজ করা শুরু করেছে । এতো সহজেতো আজ ঘুম ভাঙার কথা না।

কম্পিউটার রুমে এসে আবার লাইট অফ করলাম।
দেখি- প্রহেলিকা, প্রহেলি, প্রাণ পাখি, জান, জানু পাখি, কলিজা, জানু, জানু, কই , কই , তুমি কই , কই জানু পাখি, জানু আমার , কলিজা আমার , পাখী আমার, ভালোবাসা আমার , হৃদয় আমার , পরান আমার, জানুরে, ও জান..........আসো তাড়াতাড়ি আসো।
যেওনা , প্লিজ। বাই বলে যাও। ইত্যাদি লিখায় পুরো ইনবক্স অদম্য ভালোবাসার কামনায় ভর্তি হয়ে আছে।

আমি তাড়াতাড়ি করে লিখলাম- সরি, সরি, সরি। মনে হলো - ও ঘুম থেকে ওঠেছে।
তাই ও কিছু বুঝার আগেই বাথরুমে চলে গেছিলাম। এতো ওথলা হলে হবে? সাহস থাকলে একেবারেই নিয়ে যাওনা? তা তো পারোনা?

তুমি আরেকটু দেরি করলে, আমি কিন্তু সত্যিই গাড়ি নিয়েই ঠিকই তোমার বাসায় চলে আসতাম।

এতো সাহস তোমার? এতো রাতে চলে আসতে? ভয় লাগতো না?

কীসের ভয়? ঐ চিকনা পাতলু কে  ভয় ?। এতো সুন্দর মোহনীয়, কমনীয় সেক্সি ,বাঁধভাঙগা যৌবনে যে ভরপুর এমন বউকে সারাদিন ঘরে রেখে যে সারাদিন ব্যাবসা নিয়েই থাকে তাকে ভয় করবো?

প্লিজ, ওরকম বলোনা। এখনো ও আমার স্বামী।

স্বামী বললেই হলো? শুধু কাগজের স্বামী। কিছু কি তোমাকে দিতে পেরেছে? তুমিতো নিজেই বলেছো- ঐ চিকনা পাতলুর সাথে তোমার সেক্সুয়াল লাইফ সুখের না।
এখনো প্রথম গোপন সেই অভিসারের পরম সুখ আমার দেহে লেগে আছে।
তোমার প্রহেলিকা নামের মাঝেই যে জিনিসটা লুকিয়ে আছে সেটাইতো ও তোমাকে ভালো ভাবে দিতে পারেনা। ও আবার স্বামী।

আমার নামের মাঝে কি লুকিয়ে আছে?

আমার বুকের মাঝখানে আসো। বুকের ওপর তোমায় রেখে কানে কানে বলি।

প্লিজ বলো।

বলবো, তুমি আমার বুকের সাথে মিশে আছো কিনা আগে বলো? আমার কোলে বসে, ,মাথা নিচু করে একটা চুমু দাও।

এই আসনটা না সবচেয়ে ভালো। দুজন দুজনাকে সবচেয়ে কাছাকাছি পাওয়া যায়। সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়।

তাই নাকি? কোন আসনটা?

কেন তোমার মনে নেই- মংলা - সুন্দরবান ট্যুরে।

মনে থাকবেনা কেন? তোমার কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগছে। ভাবতেই কেমন যেন সুখ পাই।হু,মনে করো ঠিক ঐ রকম করে বসে আছি। এবার বলো, আমার নামের মাঝে কি পেলে?

জানুরে, জানু পাখিরে, ও কলিজারে । আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। এতোবার অভিসারেও মন ভরেনা।
বারবার , বারবার তোমাকে পেতে, তোমার শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে মন চায়।
মন চায়,পায়ের নখ থেকে চুলের আগা পর্যন্ত কামনার লালায় ভিজিয়ে দেই। আমি যে আর পারছিনা।

সত্যি করে বলোতো আমি তোমার কি ছিলাম, আর কি হলাম?
তুমি আমার সব। তুমি আমার ভ্যানিলা স্কাই ম্যুভির ক্যামেরন দিয়াজ।

সেটা আবার কি?
একসাথেইতো দেখলাম। মনে নাই- ক্যামেরুন দিয়াজ টম ক্রুজের ফাক বাডি থাকে- ভ্যানিলা স্কাই ম্যুভিতে।

আমার শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে। নিজের ভিতরে তোলপাড় করছে। আর সহ্য করতে পারছিনা। তাহলে আমি তোমার শুধু ফাকবাডি? আর কিছু না?
আচ্ছা , আমি যদি আর তোমার সাথে আর কোনোদিন সম্পর্ক না রাখি?

কি বলো তুমি? কেন সম্পর্ক রাখবানা।পৃথিবীর কোনো নারীই আমাকে এতো সুখ দিতে পারবেনা।

আচ্ছা মনে করোনা, আমি আর সম্পর্ক রাখলাম না। তখন কি হবে। তুমি বিয়ে করলেইতো আমাকে আর মনে রাখবেনা। আমি চাই এ সম্পর্ক শেষ করতে।

তুমি যেদিন এ সম্পর্ক শেষ করবা।সেদিনই আমি তোমাকে না....

বলো, কি করবা আমাকে? মেরে ফেলবা?

হুমম, সত্যিই মেরে ফেলবো। মেরে কুচি কুচি করে কেটে লাগেজে ঢুকিয়ে রাখবো। তারপর নিজেও মরে যাবো।

কি বলো এসব? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?
ভালোবাসি বলেইতো তোমাকেও মারবো, নিজেও মরবো।

না জানু। তোমাকে ছাড়া আমিও এক মুহুর্ত থাকতে পারবোনা।
তবে এভাবে আর কতদিন? আমিযে আর পারছিনা। এই গোপন অভিসার আর ভালো লাগেনা।

জানু,জানুপাখি, জানুরে, কলিজারে,ওজানু, ও কলিজা।

এভাবে ডাকো না তো । বুকের ভিতর কেমন যেন করে। তোমার আহ্বানেই আমি ওয়েট হয়ে যাই।
 তুমি আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর সইতে পারছিনা , এ জ্বালা। এক্ষুনি নিয়ে যাও।

সত্যি বলছো। সত্যি তুমি চলে আসবা? কতোবার বলেছি- ঐ ভূড়িওলা তোমাকে সুখি করতে পারবেনা।
তুমি ত্বপ্ত না। ইচ্ছে করছে-আমার কামনার লালা দিয়ে তোমার সব, দেহের প্রতিটি জায়গা এখন ভিজিয়ে দেই।

প্লিজ দাও। আমাকে পিষে ফেলো, মেরে ফেলো। আমি আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে চাইনা? আমি আর পারছিনা, তুমি আসো। এক্ষুনি আমাকে নিয়ে যাও।

সত্যি তুমি চলে আসবা? সত্যি তুমি আসবা, জান রে , কলিজারে।
হু হু হু, সত্যি সত্যি সত্যি চলে আসবো। তুমি আমাকে নিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি এসো।

আমি আসছি জানু পাখি। ২০ মিনিটের মাঝে আসছি।

আসো, যত দ্রুত পারো । আমি রেডি হয়ে নিই। এই নরকে আর থাকতে চাইনা। তুমি আমাকে সুখ দাও। আমি বারবার সেই সুখ পেতে চাই।

রেডি হতে কতক্ষণ লাগবে?
শোনো , আমি শুধু তুমি আসতে আসতে একটা লাগেজ গুছিয়ে রাখবো। সিঁড়ি ঘরের পাশে রাখবো। লাগেজ একটু ভারি হতে পারে।
চিকনা পাতলু অনেক গহনা দিয়েছে। গহনা দিয়েই মনে করেছে মন ভরিয়ে রাখবে? নারীর মন কি শুধু গহনায় ভরে।
তুমি এসে লাগেজটা গাড়ীর ট্রাঙকে রেখে তারপর হর্ন বাজিও। হর্ণের শব্দ পেলেই আমি নীচে চলে আসবো।
বাই, কলিজা। বাই জানু পাখি। লগ অফ হলাম।


কম্পিউটার বন্ধ করে আমি কিচেনে যাই। ও ঘুমিয়ে আছে। সব কিছু খুব ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাই।

তারপর নিজের ব্যাড রুমে আসি। ও গভীর ঘুমে অচেতন। আস্তে আস্তে লাগেজ খুলি।
তারপর ওয়ারড্রোব থেকে কয়েকটি শাড়ি, গহনা, ব্রা, কয়েকটি প্যাটিকোট লাগেজে ডুকাই। সুন্দর করে লাগেজের চারপাশে রাখি।
ওয়ালের মাঝে আমাদের বিয়ের পর হানিমুনের ছবি শোভা পাচ্ছে। আমার বুকের সাথে ও একেবারে মিশে আছে পরম ভালোবাসায়।

আহঃ কী সুন্দর করে আমার বুকের সাথে মিশে আছে আমার প্রিয়তমা বউ প্রহেলিকা
প্রিয় প্রহেলি- সারারাত জেগে জেগে এভাবেই তুমি কলেজের ক্লাস রেডি করতে।তাই না? মংলা - সুন্দরবান গিয়েছিলে শিক্ষাট্যুরে নাকি গোপন অভিসারে।
 ফাকড বাডি। বাহঃ ফাকড বাডি । কী সুন্দর একটা শব্দ শিখলাম। ভ্যানিলা স্কাইয়ের ক্যামেরুন দিয়াজ।
তোমার গোপন প্রেমিক তোমার ফাকড বাডি তোমাকে নিতে আসছে। এখন ইচ্ছেমতো আসন সাজাতে পারবা।
বিবাহিত স্বামি আসন চিনেনা, নিষিদ্ধ প্রেমিক আসন চিনে। আমিই তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভঙংকর এবং নিখুঁত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি ও সব চিহ্ন গোপন রাখতে পারেনি।
৩৫টি সিরিয়াল খুনের পর সামান্য ভুলে ধরা পড়েছে। আর তুমিতো আমার প্রিয়তমা বধু। আর সেই প্রিয়তমা বঁধুর একটা পাসওয়ার্ড।
 এ্যাড্রিয়ান ল্যামোর মতো দুর্ধর্ষ হ্যাকারের খুজঁ নিতে হয়নি, সামান্য ছিঁচকে হ্যাকারই আমার কাজটা করে দিয়েছে।

 প্রহেলিকে আমি প্রাণভরে দেখি। স্বর্গীয় এক দেবী প্রতিমার আড়ালে কি ভয়ঙকর পাপি, নিষিদ্ধ প্রেমিকা লুকিয়ে আছে।
এই অন্তরীক্ষ পাপঅগ্নি নটরাগ্গীদের মতো শুয়ে আছে বিছানায়। যাকে আমি আপন করে পোষছিলাম।

প্রহেলিকা-মানে ফাক।"- বাহঃ ফাক, ফাক, ফাক। আজকেই জানলাম।
আমার বিবাহিতা বউ আরেক পূরুষের ফাকবাডি। আফটার ২১ কিসেস দেন আনলিমিটেড এ্যাকসেস টু বুবস। কি ম্যাথমেটিকাল লাভ।

কিচেনের ধারালো বটিকে, আমি আরো ধার করি। সুতীক্ষ্ন ধার।বটি চিক চিক করে জ্বলছে।বটি থেকে কোটি কোটি নরককীট যেন বিজলির মতো বের হচ্ছে।

জীবনের শেষ ঘুম ঘুমাও প্রিয়তমা।

মৃত তাজা  প্রহেলি আমার প্রিয়তমা বঁধুর টুকরো টুকরো দেহ সুন্দর করে লাগেজের ভিতর আমি সাজিয়ে রাখি।
দুটো সুডৌল বুবসকে আমি ২১খন্ডে ভাগ করি। এবার দেখি লাগেজ বেশ ভারি হয়ে গেছে। এতো ভারি লাগেজ টেনে নিয়ে সিঁড়ি ঘরে রাখতে পারবোনা।
আমি আরো দুটো লাগেজ নামাই। শাড়ী কাপড়, ব্লাউজ, ব্রা, গহনা দিয়ে সাজাই। রক্তের সমস্ত দাগ নিঁখূতভাবে সাঙগ করি।
 তারপর তিনটা আলাদা লাগেজ আরো নিঁখুত ভাবে সাজিয়ে সিঁড়ি ঘরের পাশে রাখি।

এরপর , আমি আবারো কম্পিউটার অন করি। মাথায় হেডফোন লাগিয়ে গান শুনি- টিনা টারনারের গান-
I've been taking on a new direction
But I have to say
I've been thinking about my own protection
It scares me to feel this way

গানের লাইনগুলো মগজের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। আমার কল্পনার গোলাপের বাগান হৃদয়ের ভিতর মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে আছে।
যে বাগানের প্রতিটি গোলাপেই আমি প্রহেলিকার   খুশবু খুঁজেছিলাম।

হ্যালো, তুমি কই। ফেসবুকে ম্যাসেজ দেই।
কোনো রিপ্লাই আসেনা। আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করি।


এরপর মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসে- আসছি জানু পাখি। এই এক মিনিটের মাঝেই আসছি।

শোনো। লাগেজ তিনটা হয়েছে। সিঁড়ির পাশেই আছে। সিন্দুক খুলে দেখি অনেক গহনা। অনেক দামী দামি শাড়ি কাপড়।
 নানা পারফিউম। যা পারি সব নিয়ে নিলাম। তুমি লাগেজ গুলো নিয়ে গাড়ীতে রাখো আমি আসছি।

কিছুক্ষন পর ম্যাসেজ আসে-
লাগেজ ওঠানো শেষ। তুমি কই তাড়াতাড়ি আসো। কতক্ষন হলো গাড়ীতে বসে আছি।কতবার ফোন দিলাম । ফোন ধরোনা কেন?

জানপাখি, একটা সমস্যা হয়েছে। ও ঘুম থেকে ওঠে গেছে। তাই ফোনে কথা বলতে পারছিনা।
আমাকে বিছানায় না দেখলে যেকোনো সময় এই রুমে আসতে পারে। তুমি এক কাজ করো। গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাও। আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে আসছি।

ফেসবুক থেকে আমি লগ আউট হই। লাউড স্পিকারে টিনা টার্নার বাজতে থাকে-
I've been taking on a new direction
But I have to say
I've been thinking about my own protection
It scares me to feel this way ।


( প্রহেলিকা  অক্ষ - মামুন অক্ষ )

লাইফ টার্ন

লাইফ টার্ন
আব্দুল্লাহ মামুন অক্ষ 
--------------------------------------------------------------------
বিমানবন্দর থেকে বিমান ছেড়েছে ঘন্টা তিনেক হলো। বুঝবার উপায় নেই কোন দেশে আছি এখন।
জানালার ওপাশে শুধু শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি,পেজো তুলোর মত নরম মেঘ।
মেঘের বিশাল পাহাড় কেটে কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বিমান।
কেনো জানি প্রকৃতির এই বিষয়গুলো মনে আর দাগ কাটতে পারে না।
কি জানি কেনো! হয়তো এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি কিংবা বুড়িয়ে যাচ্ছি!
বয়স তো আর কম হলো না... আমার পাশের ভদ্রলোকটি বেশ।
বিমানবন্দরেই প্রথম পরিচয় হলো।প্রথম পরিচয়েই আলাপ বেশ জমে গেছে।
এমনকি ঘরকন্নার ব্যাপারগুলোও।ঘরে তার সুন্দরী স্ত্রী। সেই মহিয়সীর জন্য মাঝে মাঝেই তিনি বেশ উতলা হয়ে যাচ্ছেন।
অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়লে যে রকম হয়! তবে লোকটার ব্যবহার অমায়িক।
মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা তার চোখে মুখে।আমার পরিচয় পেয়েই তিনি বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন হঠাৎ।
-আরে ধ্রুব সাহেব! আপনার লেখা পড়েছি।বেশ লেখেন আপনি!
-এ আর এমন কী! লেখালেখি আমাররটেশা নয়,বলতে পারেন নেশা।
আর জীবনকে অনেক কাছের থেকে দেখেছি তো, তাই জীবনের অলি-গলি মোটামুটি চেনা।
সেই কথাগুলিই উগড়ে দেওয়া আর কি!
-সে আপনি যাই বলেন! মাইরি বলছি,আপনার লেখায় জীবন খুঁজে পাওয়া যায়।আমার স্ত্রীও আপনার লেখার ভক্ত।
মাঝে মাঝে আপনার লেখা পড়ে ওকে কাঁদতে দেখেছি।
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ত।
যাহোক, সুইজারল্যান্ডে কি করছেন আপনি?
-সুইজারল্যান্ডে একটি কোম্পানিতে মেকানিকাল ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে কাজ করছি। 
আর এই দু'এক লাইন লিখি।এই আর কী!
এয়ার হোস্টেস এসে কফি আর লাইট ফুড দিয়ে গেলো। দেখতে বেশ মেয়েগুলি!
Smart বলতে যা বুঝায়।সবসময় মুখে হাসি আর কেমন যেনো একটা বিনীত ভাব।
ঝক্কিঝামেলা ও কি কম পোহাতে হয় এদেরকে!
সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে,বিশেষ করে কোমর বুকের খালি অংশের দিকে।
আবার কেউবা পেরেও না পারার ভান করে বলে,
"Excuse me,would please help me to bind my
seat belt?"
ওদের শরীরে স্পর্শ লাগানোর ফন্দি একটা! ওরা আর কি করবে!
"sure sure,why not?"বলা ছাড়া আর কি করবে।যাদ্রীদের জন্য ওরা নিবেদিত প্রাণ!
অধরার ও এয়ার হোস্টেস হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।ও প্রায়ই বলতো,"দেখো আমি ঠিকই এয়ার হোস্টেস হবো!"
ওকে খোঁচা দিয়ে বলতাম,"হু,মহারাণী এয়ার হোস্টেস হবেন!এয়ার হোস্টেস হতে হলে চেহারায় কিছু থাকা লাগে বুঝলেন!
তোমাকে দেখতে যা লাগে না!
তাতে..."
মূহুর্তের মধ্যে দপ করে নিভে যেতো ও।অনেকক্ষণ রাগ করে থাকত।তারপর বলতো,"তুমি চাওনা আমি এয়ারহোস্টেস হই।
তো এত ঢং করার দরকার কি,হ্যাঁ??"
-
তুমি তো জানো,তোমাকে ছাড়া আমি দূরে থাকতে পারবো না,তবু কেনো...
-আচ্ছা বাবা,ঠিক আছে।মন খারাপ করছো কেনো?সারাজীবন আমি তোমার লেজ ধরেই ঘুরে বেড়াবো! খুশি???
বলেই ওর সেই ভুবনভোলানো হাসি,যা আমি কোনদিনও হয়তো ভুলতে পারবো না,পারিনি।
ওর স্মৃতি আমাকে এটি ভুলতে দিবে না। কি জানি কোথায় আছে ও!কতদিন দেখি না ওকে।
শেষবারের মত ওকে দেখেছিলাম কোনো এক ভ্যালেন্টাইন ডে-তে।
কার্জন হলের সামনে সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা কররেছিলো ও।
টিউশনি করে আসতে আসতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। 
পেছন থেকে এসে ওর চোখটা ধরে চমকে দিয়েছিলাম। একটা নীল শাড়ি পড়েছিল ও।
আগের দিন নিউমার্কেট থেকে সারা বিকেলটা ঘুরে টিউশনির পুরো টাকা দিয়ে এটা কিনেছিলাম।
নীল শাড়িতে অন্যরকম লাগছিলো ওকে। তারপর রিকশায় করে অনেকক্ষণ ঘুরেছিলাম।তারপর বলাকাতে।
তাও প্রায় বিশ বছর হতে চললো। বিশটি বছর!!
হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।বিমানের জানালার ওপারে পৃথিবীতে আঁধার নেমেছে ততক্ষণে।
জ্যোৎস্নার আলো ফুটছে কেবল। রুহুল সাহেবের চোখে-মুখে ঘুম লেগে আছে।ঝিমুচ্ছেন তিনি।
মায়াময় একটি ঘোরলাগা পরিবেশ চারিদিকে। কেনো জানি অধরাকে মনে পড়ছে খুব।
স্বপ্নের মত ছিলো দিনগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকতো ও,আর আমি আহসানউল্লাহ হলে।
কোনোদিন টি.এস.সি তে জম্পেশ আড্ডা,কোনদিন বা ধানমন্ডি লেক।
আবার কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো।রিকশায় আবার কখনো শহর চষে বেড়ানো।
কোনো সন্ধ্যায় আবার বলাকায় সিনেমা দেখা। রাত করে হলে ফিরা। 
ছোটোখাটো রোমাঞ্চ, হাতে হাত,লজ্জ্বায় ছোট্ট করে ঠোঁট ছুঁয়ে দেওয়া, তারপর ওর নাকমুখ লাল হয়ে যাওয়া!
এভাবেই চলছিলো দিনগুলি। হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন। কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেলাম। 
নিজেকে নিজের সাথে মেলাতে পারতাম না। মায়ের অনুপ্রেরণা,বাবার স্বপন,ছোটো বোনদের নিষ্পাপ মুখ আমাকে ভেঙে পড়তে দেয় নি।
আর একজনের ভালোবাসা নীরবে কাজ করে যেতো!মাঝে মাঝে প্রচন্ড ভাবে ভেঙে পড়তাম।
নীরবে কান্না করতাম,কিন্তু এটাও চোখ এড়াতো না ওর। 
মায়ের কষ্টেভরা অথচ প্রত্যয়ী মুখ,বাবার বুনে দেওয়া স্বপ্নবীজ আর ওর স্নেহমাখা ভালোবাসার কারণেই হারিয়ে যাওয়া নিজেকে ফিরে পেতাম।
স্বপ্ন দেখতাম নততুন করে বাঁচার,বাঁচানোর। স্কলারশীপ নিয়ে সুইজারল্যান্ড গেলাম।
তারপর থেকে কেনো জানি অধরার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হতে লাগলো।ও কেননো জানি অন্যরকম হতে লাগলো।
ঠিক আগের মতো ওকে মিলাতে পারতাম না। তারপর পৃথক হয়ে গেলাম দু'জনে। ৪ বছরের প্রেমে চির ধরলো।
এর দায় আমি ওকে দিইনা কখনো,আবার নিজেকেও অপরাধীর কাঠগরায় দাঁড় করাতে পারি না।
প্রথম প্রথম যোগাযোগ হতো।তারপর আর হয়ে উঠে নি।একবার শুনেছিলাম বিয়ে হয়েছে ওর কোন এক
বিজনেসম্যানের সাথে পারিবারিক ভাবে।সম্ভবত সবুজ বলেছিল।খবরটা যে খুব ভালো লেগেছিল তা নয়।
বরং খুব হতাশ হয়ে যেতাম,একাকীত্ব চারিদিক হতে গিলে ফেলতে চাইত আমাকে।
ও অন্য কারো জীবন সঙ্গিনী এটা ভাবতেই এখনো বুকের বামপাশে চিনচিন করে ব্যথা করে।
-ধ্রুব সাহহেব,এয়ারপোর্টে কে আসছে নিতে? ভাবি নিশ্চয়ই!
ভাবনায় ছেদ পড়ল রুহুল সাহেবের কন্ঠ শুনে।সেই সাথে প্রশ্নটার জন্য সাময়িক একটা শূন্যতাও অনুভব করলাম।
থতমত করে হেসে দিয়ে বললাম,"ভাবী! ভাবী আসবে কোত্থেকে!?"
-কেনো বিয়ে করেননি নাকি? -নাহ তা আর হলো কোথায়!
রুহুল সাহেব আশ্চর্য হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।
মনে মনে ভাবছিলেন, 'এ আধা চুল পাকা বুড়ো বলে কি!' তার জিগ্যাসু চোখে অনেক প্রশ্ন বুঝতে পারছি।
আমার হাসি দেখে তিনি বুঝে নিলেন মনে হয়,আর প্রশ্ন করলেন না।আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
কারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে আমার সবচেয়ে বড় এলার্জি।আর অধরা এই কাজটা করতো সবচেয়ে বেশি।
ম্যাজিস্ট্রেটের মত,'কেন চুল এতো ছোট করেছি, কেন শুকনো শুকনো লাগছে তোমায়! কত্ত প্রশ্ন!!
রুহুল সাহেব বললেন, "যদি কিছু মনে না করেন রাতে আমার বাসাতেই থাকেন,ও অনেক খুশি হবে।
আপনার রেখা ও দারুণ পছন্দ করে।"
-আচ্ছা সে দেখা যাবে। বিমান বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পৌঁছেছে অনেক্ষণ।একটু পরেই হয়তো ল্যান্ড করবে এয়ারপোর্টে।
মাটি থেকে বিমানের দূরত্ব কমছে। আর আলোকময় ঢাকাকে অন্যরকম লাগছিল।শতশত তারা জ্বলছে যেননিচে।
আর চারিদিক কেমন মায়াময়,স্তব্ধ। বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামছে।
জ্যোৎস্নার আলোয় রানওয়েতে বিমানের ছায়ার দৈর্ঘ্য বাড়ছে।তারপর তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে এটি রানওয়ে স্পর্শ করলো।
মূহুর্তেই শিহরণ খেলে গেল শরীরে,কেঁপে কেঁপে উঠছে গা।কত বছর পর ফিরে আসা আমার জন্মভূমিতে।
উত্তেজনায় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।রানওয়েতে অনেক্ষণ দৌঁড়িয়ে বিমান থামল।বিমান থেকে নামলাম।
বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম অনেক্ষণ। বাতাসে আমার জন্মভূমির মাটির সোদা গন্ধ!
রিসেপশনে এলাম।রুহুল সাহেবের স্ত্রী এসেছেন নাকি গাড়ি নিয়ে। আর তার ছেলে।
রুহুল সাহেব কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন । সামনের দিকে।চার-পাঁচ বছরের একটা ছেলেতাকে' বাবা বাবা' বলে উঠল।
রুহুল সাহেব ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিলেন। বাবা-ছেলের মিলন। দেখতে বেশ ভালোই লাগছিলো। পাশেই তার স্ত্রী।
নীল শাড়ি পরেছেন তিনি।কিন্তু চেহারাটা যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে।রুহুল সাহেববকে জিগ্যাসা করলেন,"কেমন
ছিলে,পথে কোন সমসা হয়নি তো?"
চমকে উঠলাম।খুব পরিচিত একটা কন্ঠ। এবার আর চিনতে ভুল হলো না।
ভালো করে তার দিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠি,'অধরা!'
নিজেকে জোর করে সামলালাম। ভাগ্য আবার আমাকে নিয়ে খেলছে।
রুহুল সাহেব তার স্ত্রীরর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন,"আমার স্ত্রী অধরা শিকদার,আর অধরা দেখো তো ইনাকে চিনো কি না?" অধরার মাথা নিচু।
ও আমার দিকে তাকাতে পারছে না।
আরে ইনি ধ্রুব সাহেব,তোমার প্রিয় লেখক।ধরে এনেছি।এখন তুমিই জানো এটাকে কি করবে!"
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ও আমার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতার হাসি দিলো।
ঠিক বিশ বছর আগের সেই হাসি,বুঝলাম হাসতে ওররপ্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। অভাগা আমি তাও পারলাম না।
ও কখনো এটা আশা করেনি। ঘটনার আকস্মিকতায় ও স্তব্ধ।রুহুল সাহেবরে বললাম,"আমার গাড়ি আসছে, বিদায় তাহলে"
-সে কি গাড়ি আসছে মানে?
না ভাই,তা হবে না।আপনি আজ রাতে থাকবেন আমার বাসায়।
-সে কি করে হয়!আমি হোটেলে রুম বুক করেছি যে!যাই ভাই।
হয়তো দেখা হবে জীবনের কোন এক জংশনে!
রুহুল সাহেবের ছেলেকে আদর করে কোনোমতো ওর সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচলাম।
গাড়ি এসেছিল।লাগেজগুলো পিছনে উঠানোর পর গাড়িতে উঠে বসলাম।
রবীন্দ্র সংগীত বাজছিল টেপরেকর্ডারে।কেন জানি কান্না পাচ্ছিল। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে ওর।
চেহারায় ব্যক্তিত্ব আর বয়সের দৃঢ় ছাপ।সেই নীল শাড়ির অধরা নীল শাড়িতেই কত ভিন্ন!
সময় কত বদলে দেয় মানুষকে। আমি জানি ও এখন কাঁদছে।নীল শাড়ির আঁচল দিয়ে কান্না লুকানোর প্রানপণ চেষ্টা করছে।
ভুলে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে বিশ বছর পরে দেখা আমাকে। পারবে কি ও?

ধ্রুব অক্ষ

দেয়ালিকা


দেয়ালিকা
- (শেষ রাতের আঁধার)

রিমি যখন কলেজে পড়ে আমি তখন ভার্সিটিতে। রিমির বাসার সামনে নিজের নামে লেখা, "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা সেটে দিয়েছিলাম। এই ভেবে যদি কখনও রিনির গৃহ শিক্ষক দরকার পড়ে, আর আমাকে ফোন করে বলে। রিমির  বাসার আশেপাশের সব "পড়াতে চাই" দেয়ালিকা আমি তুলে ফেলেছিলাম শুধু আমারটা বাদে। এটাও এই ভেবে, অন্তত অন্য কারও সুযোগ না থাকুক। আমি বখাটে ছিলাম না, ছিলাম ভীতু। বখাটে হলে রিমির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রিমির জন্য অপেক্ষা করতাম। রিমি আসলে পিছন পিছন যেতাম, শিস মেরে রিমির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম। পথ আগলিয়ে বাসার ফোন নাম্বার চাইতাম। আমি অমন কিছুই করি নি। অমন কিছু করা আমার দ্বারা সম্ভবও ছিল না। আমি রিমির বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। রিমি বিকালে বারান্দায় এসে দাঁড়ালে গলির দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে রিমিকে দেখতাম। রিমির চোখে চোখ পড়ুক আমি চাইতাম না কখনও। আমার ভালবাসা শুধু জমে ছিল ঐ দোতলার বারান্দা আর এই সরু গলির দেয়ালের আড়ালে। ঐ গলির মাঝে দাঁড়িয়েও নিশ্চিন্তে দেখতে পেতাম রিমিকে ব্যাপারটা তেমন না। খেয়াল রাখতে হত আশেপাশের কেউ আমায় দেখছে কিনা। কেউ গলি গিয়ে চলাচল করছে কিনা। আমি প্রতিদিন এখানে আসি, ব্যাপারটা কেউ অন্য ভাবে নিচ্ছে কিনা। আমি ভীতু ছিলাম, ভীতুদের ঐ ভয় গুলো থাকেই। গলি দিয়ে কেউ গেলে, আমি সোজা হয়ে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করতাম। আমাকে কেউ দেখে ফেললে, কোথাও বাড়ি ভাড়া হবে কিনা তা খোঁজার ভান করে এদিক ওদিক ঘুরতাম।
রিমি বিকালে বড় জোর ঘণ্টা খানেক বারান্দায় দাঁড়াত। আমার মাইনাস পাওয়ারের চশমা দিয়েও স্পষ্ট বোঝা যেত না রিমির চেহারা। তবু মনের টানে, কল্পনায়, রিমির একটা স্পষ্ট মুখচ্ছবি দেখতাম। রিমি চুল মেলে দাঁড়াত, বাতাসে চুল উড়ে মুখে পড়লে তা সরাত, বাতাসে ওড়না একটু নড়ে গেলেই ঠিক করে নিত। আমি মুগ্ধ হয়ে সেসব দেখতাম। ছোট ছোট এই বিষয় গুলোও এতোটা ভাল লাগার ছিল, ভালবাসার ছিল আমি জানতাম শুধু। ভালবাসা এমনই, ভালবাসলে ভালবাসার মানুষের প্রতিটা ছোট ছোট জিনিসের প্রতি, কাজের প্রতি, প্রতিটা অঙ্গভঙ্গির প্রতি ভালবাসা চলে আসে, ভালবাসা যতদিন থাকে তা থাকে, ভালবাসা চলে গেলে এই ভাল লাগাও বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কারও শরীরে বাসা বাঁধে।
আমি প্রতিদিন গিয়ে দেখে আসি, আমার সাঁটানো দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেলল কিনা। নতুন করে কেউ দেয়ালিকা লাগাল কিনা। আমার নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়াল নিজের দেয়ালিকা কেউ তুলে ফেললে নতুন করে লাগানো। অন্যের দেয়ালিকা তুলে ফেলা। তবে সেসবে খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। আমার ফোনে কেউ কোনদিন ফোন করে পড়ানোর কথা বলে নি। রিমিকে পড়ানোর ব্যাপারেও না, অন্য কাউকেও না।
সে দিনটায় অবশ্য অন্য রকম কিছু ছিল। আমার ছোট মোবাইল ফোনটায় একটা কল আসল। আমি ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভারী গলার কেউ বলেছিল, আপনি মামুন ?
- জ্বি।
- আপনি কি পুলিশলাইনে বাসার সামনে পড়ানোর জন্য পোস্টার লাগিয়েছেন?
আমি ধুরু ধুরু বুকে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিলাম, জ্বি।

পড়ালেখায় আমার দিন বেশী একটা ভাল যাচ্ছে না। স্কুলের পড়াশুনা আর কলেজের পড়াশুনার মাঝে বিশাল তফাৎ। প্রথম ক্লাস টেস্টের সব গুলোতে ডাব্বা। ব্যাচে স্যারদের কাছে পড়লেও, আমার বুঝতে খুব সমস্যা হয়। কিছু না বুঝলে স্যারদের কাছে জিজ্ঞেস করব সেটাও হয় না। সবাই বুঝছে, আমি একা বুঝছি না, ব্যাপারটা লজ্জার। লজ্জা ভেঙে স্যারদের প্রশ্ন করা হয় না। বাবা মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কোথা থেকে এক গৃহ শিক্ষক যোগাড় করলেন। হাবাগোবা চেহারার গৃহ শিক্ষক। যদিও খুব ভাল পড়ান, তবুও কিছু ব্যাপার আমার কেমন যেন লাগত। আমি "স্যার" বললেই, তিনি এমন ভাবে চমকে উঠতেন, যেন আমি না জানি কি বলেছি। আমার স্যার আমাকে প্রথম দিনই বলেছেন, যদি একটা পড়া একবারে না বুঝো, দুইবার জিজ্ঞেস করবে, দুইবারে না হলে একশ বার। আমি বিরক্ত হব না।
আমার স্যার বিরক্ত হতেন না। তিনি বেশী মাত্রায় ধৈর্যশীল। অতি মাত্রায় লাজুক। একবার অসাবধানতায় আমাকে পড়া বুঝাবার সময়, আমার হাতের সাথে ওনার আঙ্গুলের স্পর্শ হওয়াতে উনি এতোটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে, বার বার করে বলছিলেন, সর‍্যি রিমি, সর‍্যি আমি। আমি ইচ্ছা করে কাজটা করি নি। আমি বুঝতে পারি নি। প্লিজ তুমি আঙ্কেল আন্টিকে কিছু বোলো না, প্লিজ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম তার আচরণ দেখে, এটা এতো বড় কোন ব্যাপার ছিল না। উনি কাজটা ইচ্ছা করে করেছিলেন তাও না। আমি সবসময় ওনার সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার চেষ্টা করতাম, উনি সবসময় একটা দূরত্ব রাখার চেষ্টা করতেন। উনি বন্ধু হতেই পারেন, বেশ ভাল একটা বন্ধু। ওনার কারণে আমার পড়ালেখায় ফলাফল ভাল হচ্ছে। আমি যখন ওনাকে বলি, স্যার আপনি না থাকলে আমি ফেল করেই যেতাম, আপনার গল্প আমি সবার কাছে করি।
উনি তখন বলতেন, দেখো, এটা তেমন কিছু না। প্রথম দিকে কলেজে অমন খারাপ ফলাফল সবাই করেই। আমিও করেছিলাম।
আমার তা বিশ্বাস হত না। ওনার পক্ষে খারাপ ফলাফল সম্ভব না। আমাকে ওনার এক কথায় সবসময় আঁতেল বলেই মনে হত। উনি প্রতিদিন পড়ানো শুরু করার আগে, বইয়ের ঘ্রাণ নিতেন অনেকটা সময় ধরে, আঁতেল ছাড়া এসব আর কারও পক্ষে সম্ভব না।
আমি একবার ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার ভালবাসার কোন মানুষ আছে স্যার?
উনি ওনার হাতের চায়ের কাপে রাখা চা ফেলে দিয়ে হতচকিয়ে গেলেন। চা মুছতে মুছতে বললেন, পড়ালেখাটা এতো কঠিন না বুঝলে? যখন পড়ালেখাকে ভালবাসবে, তখন দেখবে পড়ালেখাও তোমাকে ভালবাসা শুরু করবে। একটা কিছুর পিছনে লেগে থাকলে তা তোমার হবেই।
উনি সব কিছুই ঘুরে ফিরে পড়ালেখার দিকে নিয়ে যেতেন। এর মধ্যে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা চলে আসল কাছাকাছি। বাবা মা ওনাকে খুব পছন্দ করেন। আমার স্যার আমাকে পড়ানোর পাশাপাশি বি সি এস এর প্রস্তুতি নিতেন। আমার নিজের ফলাফলের প্রতি যতটা না বিশ্বাস ছিল তার চেয়ে বেশী বিশ্বাস ছিল স্যারের বি সি এস হয়ে যাবে।
হয়েছিলও তাই। আমার স্যার এখন ডি সি অফিসের সহকারী কমিশনার। যদিও ঢাকায় থাকেন না, চাকরির খাতিরে গোপালগঞ্জ আছেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ওখানেই আছি। মাঝে একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমার স্যারের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার স্যার 'উনি' থেকে 'ও' হয়ে গেল। প্রেম করে বিয়ে করেছি তেমন না, ও প্রেম করার মত ছেলে না। যে ছেলেকে কাউকে ভালবাসে কিনা জিজ্ঞেস করলে, পড়ালেখায় ভাল ফলাফলের একশ উপায় বলে, তার পক্ষে প্রেমকে সম্ভব করা অসম্ভব। বাবা মেয়ের পছন্দ ছিল, পছন্দ ছিল আমারও। না করেনি আমার স্যারও। এখন সংসার চলছে, আমার মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি আর মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া আমার স্যারটার সাথে।
ভেবেছিলাম আগের পরের অনেক কিছুই লিখব ডায়েরিতে। মোটা ডায়েরি ভরে অনেক কিছু থাকবে, ছোট ছোট অনেক কিছু, আমার কথা, ওর কথা, অনেকের কথা। কিছুই হল না। ডায়েরি লেখা এখানেই সমাপ্ত। অনেক কিছুই লেখা হয় না, চাইলেই লিখে প্রকাশ করা যায় না।

সেদিনের সে ফোন আমার জন্য ভাল কোন ফলাফল বয়ে আনে নি। উল্টা ঝাড়ি খেয়েছি। ফোন দিয়ে কর্কশ গলায় দেয়ালে পোস্টার লাগানোর দায়ে এক লোক এক গাদা ধমক, বকা যাচ্ছে তাই বলে দিল। "দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ" দেখেও কেন পোস্টার লাগালাম সে ব্যাপারে জবাব চাইল। পরবর্তীতে আবার পোস্টার লাগালে পুলিশে দিবে বলে শাসিয়ে দিল। দেয়ালে পোস্টার লাগালে পুলিশে ধরে কিনা, পুলিশে ধরলেও কোর্টে চালান করে কিনা, করলেও দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিচার করতে জর্জ সাহেব উকিলেরা আসে কিনা, এই অপরাধে জেল জরিমানা হয় কিনা আমার জানা ছিল না, শুধু জানা ছিল এই অপরাধ করতে হবে। করাটা জরুরী। এতো অপরাধ করেও না আমি পাচ্ছিলাম কোন শাস্তি, না পাচ্ছিলাম কোন পুরষ্কার। "সবুরে মেওয়া ফলে", আমার মেওয়া কোনভাবেই ফলছিল না। মেওয়া গাছের পিছনে এতো সময়, এতো পরিশ্রম করেও না। আমার ভালবাসা দিনে দিনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল, দেয়ালে সাঁটানো দেয়ালিকার প্রিন্টের হরফের মত।
সে ফোনের বহুকাল পরে আমার ফোনে আবার ফোন এসেছিল। কতকাল পরে জানি না। এতো বছরের হিসাব আমি রাখি না। শুধু জানতাম আমি একটা মোহে ছিলাম, সে মোহ কাটছিল না। ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি গলায় বলেছিল, হ্যালো, মিনহাজ বলছেন?
- জ্বি।
- আপনি পড়ানোর জন্য বোধহয় একটা পোস্টার লাগিয়েছিলেন?
- জ্বি, জ্বি।
- আমার মেয়েটা ক্লাস টু তে পড়ে। ওকে পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক খুঁজছিলাম।
ফোনটা করেছিল রিনি। আমার এতদিনের ইচ্ছে, এতো দিনে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রিমি ওর ক্লাস টু তে পড়া মেয়েটাকে পড়াবার জন্য আমাকে ফোন করেছে। রিমির বিয়ে হয়েছে। ওকে যে ছেলেটা পড়াত সেই ছেলেটার সাথেই। ছেলেটার নাম আমি জানি না। যে টুকু জানি ছেলেটা সরকারী চাকরি করে, যে টুকু জানি রিমি ভাল আছে, যে টুকু জানি ওদের একটা মিষ্টি করে মেয়ে আছে। আর যে টুকু জানি আমি ভাল নেই। রিমির বিয়েতে আমি গিয়েছিলাম, দাওয়াত ছাড়াই গিয়েছিলাম। রিমিকে বিয়ের সাজে আরও সুন্দর লাগছিল সেদিন। তবু সে সুন্দর দেখে আমার বুকের ভিতর জ্বালা করছিল, কোথায় যেন একটা ব্যথা করছিল, আমি সে ব্যথাটা ধরতে পারছিলাম না, ছুঁতে পারছিলাম না, বলতেও পারছিলাম না, "ব্যথা পাবার কিছু নেই। সত্যি কিছু নেই।" রিমির শ্বশুর বাড়ির ঠিকানাও যোগাড় করেছিলাম, অকারণে রিমির শ্বশুর বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেরাতাম। রিমি আর ওর স্বামীকে দেখতাম। বেশ মানিয়েছে দুজনকে। আমার মত কাউকে ঠিক মানাতো না। রিমির একটা মেয়ে হল, সে মেয়েটা স্কুলে ভর্তি হল। আবার আমার দেয়ালিকা সাঁটানো শুরু হল। আমি রিমিকে তাও দেখি, মেয়ে নিয়ে স্কুলে যায়, মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। আসা যাওয়ার পথে আমার সাথে কখনও চোখাচোখি হয় না। ও দৃষ্টি আমার দৃষ্টিতে পড়বার জন্য নয়, থমকে থাকার নয়, চমকে গিয়ে আটকে যাবার নয়।
আমি পাস করেছি কোনমতে। বাবা, মা নেই, প্রেমিকা নেই। তাই কেউ চাকরি করার জন্য তাড়াও দেয় নি। চাকরি আমি করিও নি, করিও না। টুকটাক টিউশনিতে চলছে দিন। একদিন সে দিন গুলো থমকে যাবে, চমকে ঠিক আটকে যাবে। সে খবর কেউ রাখবে না, সে খবর কেউ কাউকে দিবেও না।
আমি শেভ করে পরিপাটি হয়ে রিমিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রিমির মেয়েকে পড়াব, আর একটা টিউশনি বাড়ল, বাড়তি কিছু টাকা, আর একটু ভাল ভাবে চলা।
রিমিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেয়ালিকাটা এখনও লেগে আছে দেয়ালের সাথে। সেখানে আমার নাম, মোবাইল নাম্বার, আর পড়াতে চাই আমি সে আকুতি। মানুষ খুব মন থেকে কিছু চাইলে, চেষ্টা করলে, একটা কিছুর সাথে লেগে থাকলে, তা পায়। আমি চেয়েছিলাম আমার দেয়ালিকা পড়ে কেউ আমাকে ফোন করুক, রিমির বাসায় যাবার আমার অনুমতি হোক। আমি তা পেয়েছিও। হয়ত এর বেশী কিছু চাই নি, চেষ্টাও করি নি, তাই পাই নি। আমি এক টানে দেয়ালিকাটা তুলে ফেললাম। আমার চাওয়া পূরণ হয়েছে, পাওয়ার আর কিছুই নেই এই দেয়ালিকা থেকে। মাটিতে দেয়ালিকাটা ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে চলে আসলাম। রিমিদের বাসায় গেলাম না, যাবও না হয়ত। কড়া রোদের মাঝে ছাতা ছাড়া আমি চলতে লাগলাম, দেয়ালিকাটা পিছনে ফেলে। দেয়ালিকাটা একদিন হারিয়ে যাবে, গোপনে খুব গোপনে। ঐ দেয়ালিকার খোঁজ কেউ করবে না। ঐ দেয়ালিকার আবেদন কেউ কখনও বুঝতেও পারে না। খুব সাবধানে সবাই এড়িয়ে চলে। দেয়ালিকার মত কিছু মানুষ সারাজীবন কিছু মোহে আটকে থেকেও কখনও বোঝাতে পারে না, আমি কী চাই, আমার কী দরকার, আসলেই কতটা দরকার। খুব নীরবে সে আবেদন হারিয়ে যায়, মূল্যহীনের তালিকায় নিঃশব্দে যোগ হয়। হৃদয়ের অন্তর্দহনে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। উড়ে উড়ে অন্য কোথাও বাসা বাঁধে না। টুপ করে হারিয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায়।

অক্ষ

HINDI PROPOSE SHAYARI SMS

HINDI PROPOSE  SHAYARI   Dil ye mera Tumse Pyar karna chahta hai, Apni Mohabbat ka izhaar karna chahta hai, Dekha hai jab se Tumhe aey me...