পরকীয়া প্রেম - প্রহেলিকা

পরকিয়া প্রেম -  প্রহেলিকা

প্রহেলিকা, প্রহেলি, প্রাণ পাখি, জান, জানু পাখি, কলিজা, জানু, জানু, কই , কই , তুমি কই , কই জানু পাখি, জানু আমার ,
কলিজা আমার , পাখী আমার, ভালোবাসা আমার , হৃদয় আমার , পরান আমার, জানুরে, ও জান..........আসো তাড়াতাড়ি আসো।
যেওনা , প্লিজ।

মনের মাঝে খুব অসস্থি। দারুন অপরাধবোধ কাজ করছে। এই পাপবোধের জন্য মনে হয় ঘুম আসছেনা ।
রাত নিশি হচ্ছে ক্রমশঃ। কিন্তু কীসের যেন এক দূর্নিবার নিষিদ্ধ আকর্ষণ আমাকে টানছে।

আমার চোখ আটকে আছে ফেসবুকের পাতায়।
ম্যাসেজের দিকে চেয়ে আছি। "হ্যালো প্রহেলিকা" , আর কতক্ষণ বসে থাকবো?
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর লিখলাম- হ্যালো।

তুমি এতো দেরীতে রিপ্লাই দাও ভালো লাগেনা। জানোনা, ওয়েটিং ইজ সোর, প্রিয়  প্রহেলিকা । প্রিয়  প্রহেলি। তোমার জামাই কই? এখনো ঘুমায় নাই?

জ্বি,পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে।

তোমার কি মন খারাপ? এতো দেরী করে রিপ্লাই দাও কেন? মন মানে না,জানু পাখী। তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও ভালো লাগেনা। আমার সারাক্ষণ শুধু তোমার নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করে।

আমি ধীরে ধীরে লিখলাম-শুধুই কি ডাকতে ইচ্ছে করে? আর কিছু না।
কি ডাকতে ইচ্ছে করে?
জানু, জানু পাখি, জানু , জানুপাখি, জানু , জানুপাখী, জানু, জানুপাখী।সারাক্ষণ শুধু ডাকতে ইচ্ছে করে প্রিয় প্রহেলিকা। কিন্তু তারপরও যে আমার তৃষ্না মিটেনা।

তোমার তৃষ্না মিটে কীসে?
তুমি জানোনা, কীসে তৃষ্নামিটে। তোমাকে কতগুলো চুমু খেয়েছি জানো। মোট ৭৯১ টা। তারপরও তৃষ্না মিটেনা।
প্রতিটি চুমুর পর নতুন করে তৃষ্না জাগে। প্রতিটি চুমুই মনে হয় নতুন। এভরি লাস্ট কিস ইজ ফার্স্ট কিস।

বাহবা। প্রতিটি চুমু তুমি গুনে রেখেছো। এতো ভালোবাসো?

শুধুই কি চুমু গুনে রেখেছি। ছোট অভিসার, বড় অভিসার, গভীর অভিসার। শুকনো, ভেজা সব গুনে রেখেছি। তোমার সবচেয়ে সুন্দর কি জানো?
কি?
পামেলা এন্ডারসান ফেইল। এতো নিঁখুত । ২১টা চুমু খাওয়ার পর যার স্পর্শ পেয়েছিলাম।
আফটার ২১ কিসেস দ্যান ইউ এ্যালাউড মি আনলিমিটেড এ্যাকসেস টু ইউর বুবস।

তাই নাকি? সব হিসাব করে রেখেছো।

হুম। তুমিই বলেছিলে। ঐ টাই নাকি পারফেক্ট লাভার।

তাই নাকি? আর ভেজা অভিসার কোনটা ?বলতো শুনি।
মুখে বলতে পারবোনা, কাছে আসো ।ওফ.....জান। জানোপাখি। জানোরে...

আরে বলোনা শুনি। শুনতে ভালো লাগছে।


এমন সময় পাশের রুমে শব্দ হলো। আমি তাড়াতাড়ি টেবিল লাইট অফ করে বাথরুমে গেলাম। এসে দেখি না ও ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমের ঔষধ কাজ করা শুরু করেছে । এতো সহজেতো আজ ঘুম ভাঙার কথা না।

কম্পিউটার রুমে এসে আবার লাইট অফ করলাম।
দেখি- প্রহেলিকা, প্রহেলি, প্রাণ পাখি, জান, জানু পাখি, কলিজা, জানু, জানু, কই , কই , তুমি কই , কই জানু পাখি, জানু আমার , কলিজা আমার , পাখী আমার, ভালোবাসা আমার , হৃদয় আমার , পরান আমার, জানুরে, ও জান..........আসো তাড়াতাড়ি আসো।
যেওনা , প্লিজ। বাই বলে যাও। ইত্যাদি লিখায় পুরো ইনবক্স অদম্য ভালোবাসার কামনায় ভর্তি হয়ে আছে।

আমি তাড়াতাড়ি করে লিখলাম- সরি, সরি, সরি। মনে হলো - ও ঘুম থেকে ওঠেছে।
তাই ও কিছু বুঝার আগেই বাথরুমে চলে গেছিলাম। এতো ওথলা হলে হবে? সাহস থাকলে একেবারেই নিয়ে যাওনা? তা তো পারোনা?

তুমি আরেকটু দেরি করলে, আমি কিন্তু সত্যিই গাড়ি নিয়েই ঠিকই তোমার বাসায় চলে আসতাম।

এতো সাহস তোমার? এতো রাতে চলে আসতে? ভয় লাগতো না?

কীসের ভয়? ঐ চিকনা পাতলু কে  ভয় ?। এতো সুন্দর মোহনীয়, কমনীয় সেক্সি ,বাঁধভাঙগা যৌবনে যে ভরপুর এমন বউকে সারাদিন ঘরে রেখে যে সারাদিন ব্যাবসা নিয়েই থাকে তাকে ভয় করবো?

প্লিজ, ওরকম বলোনা। এখনো ও আমার স্বামী।

স্বামী বললেই হলো? শুধু কাগজের স্বামী। কিছু কি তোমাকে দিতে পেরেছে? তুমিতো নিজেই বলেছো- ঐ চিকনা পাতলুর সাথে তোমার সেক্সুয়াল লাইফ সুখের না।
এখনো প্রথম গোপন সেই অভিসারের পরম সুখ আমার দেহে লেগে আছে।
তোমার প্রহেলিকা নামের মাঝেই যে জিনিসটা লুকিয়ে আছে সেটাইতো ও তোমাকে ভালো ভাবে দিতে পারেনা। ও আবার স্বামী।

আমার নামের মাঝে কি লুকিয়ে আছে?

আমার বুকের মাঝখানে আসো। বুকের ওপর তোমায় রেখে কানে কানে বলি।

প্লিজ বলো।

বলবো, তুমি আমার বুকের সাথে মিশে আছো কিনা আগে বলো? আমার কোলে বসে, ,মাথা নিচু করে একটা চুমু দাও।

এই আসনটা না সবচেয়ে ভালো। দুজন দুজনাকে সবচেয়ে কাছাকাছি পাওয়া যায়। সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়।

তাই নাকি? কোন আসনটা?

কেন তোমার মনে নেই- মংলা - সুন্দরবান ট্যুরে।

মনে থাকবেনা কেন? তোমার কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগছে। ভাবতেই কেমন যেন সুখ পাই।হু,মনে করো ঠিক ঐ রকম করে বসে আছি। এবার বলো, আমার নামের মাঝে কি পেলে?

জানুরে, জানু পাখিরে, ও কলিজারে । আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। এতোবার অভিসারেও মন ভরেনা।
বারবার , বারবার তোমাকে পেতে, তোমার শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে মন চায়।
মন চায়,পায়ের নখ থেকে চুলের আগা পর্যন্ত কামনার লালায় ভিজিয়ে দেই। আমি যে আর পারছিনা।

সত্যি করে বলোতো আমি তোমার কি ছিলাম, আর কি হলাম?
তুমি আমার সব। তুমি আমার ভ্যানিলা স্কাই ম্যুভির ক্যামেরন দিয়াজ।

সেটা আবার কি?
একসাথেইতো দেখলাম। মনে নাই- ক্যামেরুন দিয়াজ টম ক্রুজের ফাক বাডি থাকে- ভ্যানিলা স্কাই ম্যুভিতে।

আমার শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে। নিজের ভিতরে তোলপাড় করছে। আর সহ্য করতে পারছিনা। তাহলে আমি তোমার শুধু ফাকবাডি? আর কিছু না?
আচ্ছা , আমি যদি আর তোমার সাথে আর কোনোদিন সম্পর্ক না রাখি?

কি বলো তুমি? কেন সম্পর্ক রাখবানা।পৃথিবীর কোনো নারীই আমাকে এতো সুখ দিতে পারবেনা।

আচ্ছা মনে করোনা, আমি আর সম্পর্ক রাখলাম না। তখন কি হবে। তুমি বিয়ে করলেইতো আমাকে আর মনে রাখবেনা। আমি চাই এ সম্পর্ক শেষ করতে।

তুমি যেদিন এ সম্পর্ক শেষ করবা।সেদিনই আমি তোমাকে না....

বলো, কি করবা আমাকে? মেরে ফেলবা?

হুমম, সত্যিই মেরে ফেলবো। মেরে কুচি কুচি করে কেটে লাগেজে ঢুকিয়ে রাখবো। তারপর নিজেও মরে যাবো।

কি বলো এসব? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?
ভালোবাসি বলেইতো তোমাকেও মারবো, নিজেও মরবো।

না জানু। তোমাকে ছাড়া আমিও এক মুহুর্ত থাকতে পারবোনা।
তবে এভাবে আর কতদিন? আমিযে আর পারছিনা। এই গোপন অভিসার আর ভালো লাগেনা।

জানু,জানুপাখি, জানুরে, কলিজারে,ওজানু, ও কলিজা।

এভাবে ডাকো না তো । বুকের ভিতর কেমন যেন করে। তোমার আহ্বানেই আমি ওয়েট হয়ে যাই।
 তুমি আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর সইতে পারছিনা , এ জ্বালা। এক্ষুনি নিয়ে যাও।

সত্যি বলছো। সত্যি তুমি চলে আসবা? কতোবার বলেছি- ঐ ভূড়িওলা তোমাকে সুখি করতে পারবেনা।
তুমি ত্বপ্ত না। ইচ্ছে করছে-আমার কামনার লালা দিয়ে তোমার সব, দেহের প্রতিটি জায়গা এখন ভিজিয়ে দেই।

প্লিজ দাও। আমাকে পিষে ফেলো, মেরে ফেলো। আমি আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে চাইনা? আমি আর পারছিনা, তুমি আসো। এক্ষুনি আমাকে নিয়ে যাও।

সত্যি তুমি চলে আসবা? সত্যি তুমি আসবা, জান রে , কলিজারে।
হু হু হু, সত্যি সত্যি সত্যি চলে আসবো। তুমি আমাকে নিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি এসো।

আমি আসছি জানু পাখি। ২০ মিনিটের মাঝে আসছি।

আসো, যত দ্রুত পারো । আমি রেডি হয়ে নিই। এই নরকে আর থাকতে চাইনা। তুমি আমাকে সুখ দাও। আমি বারবার সেই সুখ পেতে চাই।

রেডি হতে কতক্ষণ লাগবে?
শোনো , আমি শুধু তুমি আসতে আসতে একটা লাগেজ গুছিয়ে রাখবো। সিঁড়ি ঘরের পাশে রাখবো। লাগেজ একটু ভারি হতে পারে।
চিকনা পাতলু অনেক গহনা দিয়েছে। গহনা দিয়েই মনে করেছে মন ভরিয়ে রাখবে? নারীর মন কি শুধু গহনায় ভরে।
তুমি এসে লাগেজটা গাড়ীর ট্রাঙকে রেখে তারপর হর্ন বাজিও। হর্ণের শব্দ পেলেই আমি নীচে চলে আসবো।
বাই, কলিজা। বাই জানু পাখি। লগ অফ হলাম।


কম্পিউটার বন্ধ করে আমি কিচেনে যাই। ও ঘুমিয়ে আছে। সব কিছু খুব ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাই।

তারপর নিজের ব্যাড রুমে আসি। ও গভীর ঘুমে অচেতন। আস্তে আস্তে লাগেজ খুলি।
তারপর ওয়ারড্রোব থেকে কয়েকটি শাড়ি, গহনা, ব্রা, কয়েকটি প্যাটিকোট লাগেজে ডুকাই। সুন্দর করে লাগেজের চারপাশে রাখি।
ওয়ালের মাঝে আমাদের বিয়ের পর হানিমুনের ছবি শোভা পাচ্ছে। আমার বুকের সাথে ও একেবারে মিশে আছে পরম ভালোবাসায়।

আহঃ কী সুন্দর করে আমার বুকের সাথে মিশে আছে আমার প্রিয়তমা বউ প্রহেলিকা
প্রিয় প্রহেলি- সারারাত জেগে জেগে এভাবেই তুমি কলেজের ক্লাস রেডি করতে।তাই না? মংলা - সুন্দরবান গিয়েছিলে শিক্ষাট্যুরে নাকি গোপন অভিসারে।
 ফাকড বাডি। বাহঃ ফাকড বাডি । কী সুন্দর একটা শব্দ শিখলাম। ভ্যানিলা স্কাইয়ের ক্যামেরুন দিয়াজ।
তোমার গোপন প্রেমিক তোমার ফাকড বাডি তোমাকে নিতে আসছে। এখন ইচ্ছেমতো আসন সাজাতে পারবা।
বিবাহিত স্বামি আসন চিনেনা, নিষিদ্ধ প্রেমিক আসন চিনে। আমিই তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি।

পৃথিবীর সবচেয়ে ভঙংকর এবং নিখুঁত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি ও সব চিহ্ন গোপন রাখতে পারেনি।
৩৫টি সিরিয়াল খুনের পর সামান্য ভুলে ধরা পড়েছে। আর তুমিতো আমার প্রিয়তমা বধু। আর সেই প্রিয়তমা বঁধুর একটা পাসওয়ার্ড।
 এ্যাড্রিয়ান ল্যামোর মতো দুর্ধর্ষ হ্যাকারের খুজঁ নিতে হয়নি, সামান্য ছিঁচকে হ্যাকারই আমার কাজটা করে দিয়েছে।

 প্রহেলিকে আমি প্রাণভরে দেখি। স্বর্গীয় এক দেবী প্রতিমার আড়ালে কি ভয়ঙকর পাপি, নিষিদ্ধ প্রেমিকা লুকিয়ে আছে।
এই অন্তরীক্ষ পাপঅগ্নি নটরাগ্গীদের মতো শুয়ে আছে বিছানায়। যাকে আমি আপন করে পোষছিলাম।

প্রহেলিকা-মানে ফাক।"- বাহঃ ফাক, ফাক, ফাক। আজকেই জানলাম।
আমার বিবাহিতা বউ আরেক পূরুষের ফাকবাডি। আফটার ২১ কিসেস দেন আনলিমিটেড এ্যাকসেস টু বুবস। কি ম্যাথমেটিকাল লাভ।

কিচেনের ধারালো বটিকে, আমি আরো ধার করি। সুতীক্ষ্ন ধার।বটি চিক চিক করে জ্বলছে।বটি থেকে কোটি কোটি নরককীট যেন বিজলির মতো বের হচ্ছে।

জীবনের শেষ ঘুম ঘুমাও প্রিয়তমা।

মৃত তাজা  প্রহেলি আমার প্রিয়তমা বঁধুর টুকরো টুকরো দেহ সুন্দর করে লাগেজের ভিতর আমি সাজিয়ে রাখি।
দুটো সুডৌল বুবসকে আমি ২১খন্ডে ভাগ করি। এবার দেখি লাগেজ বেশ ভারি হয়ে গেছে। এতো ভারি লাগেজ টেনে নিয়ে সিঁড়ি ঘরে রাখতে পারবোনা।
আমি আরো দুটো লাগেজ নামাই। শাড়ী কাপড়, ব্লাউজ, ব্রা, গহনা দিয়ে সাজাই। রক্তের সমস্ত দাগ নিঁখূতভাবে সাঙগ করি।
 তারপর তিনটা আলাদা লাগেজ আরো নিঁখুত ভাবে সাজিয়ে সিঁড়ি ঘরের পাশে রাখি।

এরপর , আমি আবারো কম্পিউটার অন করি। মাথায় হেডফোন লাগিয়ে গান শুনি- টিনা টারনারের গান-
I've been taking on a new direction
But I have to say
I've been thinking about my own protection
It scares me to feel this way

গানের লাইনগুলো মগজের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। আমার কল্পনার গোলাপের বাগান হৃদয়ের ভিতর মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে আছে।
যে বাগানের প্রতিটি গোলাপেই আমি প্রহেলিকার   খুশবু খুঁজেছিলাম।

হ্যালো, তুমি কই। ফেসবুকে ম্যাসেজ দেই।
কোনো রিপ্লাই আসেনা। আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করি।


এরপর মোবাইল থেকে ম্যাসেজ আসে- আসছি জানু পাখি। এই এক মিনিটের মাঝেই আসছি।

শোনো। লাগেজ তিনটা হয়েছে। সিঁড়ির পাশেই আছে। সিন্দুক খুলে দেখি অনেক গহনা। অনেক দামী দামি শাড়ি কাপড়।
 নানা পারফিউম। যা পারি সব নিয়ে নিলাম। তুমি লাগেজ গুলো নিয়ে গাড়ীতে রাখো আমি আসছি।

কিছুক্ষন পর ম্যাসেজ আসে-
লাগেজ ওঠানো শেষ। তুমি কই তাড়াতাড়ি আসো। কতক্ষন হলো গাড়ীতে বসে আছি।কতবার ফোন দিলাম । ফোন ধরোনা কেন?

জানপাখি, একটা সমস্যা হয়েছে। ও ঘুম থেকে ওঠে গেছে। তাই ফোনে কথা বলতে পারছিনা।
আমাকে বিছানায় না দেখলে যেকোনো সময় এই রুমে আসতে পারে। তুমি এক কাজ করো। গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাও। আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে আসছি।

ফেসবুক থেকে আমি লগ আউট হই। লাউড স্পিকারে টিনা টার্নার বাজতে থাকে-
I've been taking on a new direction
But I have to say
I've been thinking about my own protection
It scares me to feel this way ।


( প্রহেলিকা  অক্ষ - মামুন অক্ষ )

-যে জলে আগুন জ্বলে

-যে জলে আগুন জ্বলে
আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

---সংকলিত 
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচণ্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুড়ে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি?

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি?

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

ভালোবাসার কবিতা লিখবো না

ভালোবাসার কবিতা লিখবো না
---সংকলিত 
‘তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালোবাসার কবিতা লিখিনি।
আমার ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কবিতা সফল হয়নি,
আমার এক ফোঁটা হাহাকার থেকে এক লক্ষ কোটি
ভালোবাসার কবিতার জন্ম হয়েছে।
আমার একাকীত্বের এক শতাংশ হাতে নিয়ে
তুমি আমার ভালোবাসার মুকুট পরেছো মাথায়!
আমাকে শোষণের নামে তৈরি করেছো আত্মরক্ষার মৃন্ময়ী যৌবন।
বলো বলো হে ম্লান মেয়ে,এতো স্পর্ধা কেন তোমার?
ভালোবাসার ঔরসে আমার জন্ম! অহংকার আমার জননী!
তুমি আমার কাছে নতজানু হও,তুমি ছাড়া আমি
আর কোনো ভূগোল জানি না,
আর কোনো ইতিহাস কোথাও পড়িনি!
আমার একা থাকার পাশে তোমার একাকার হাহাকার নিয়ে দাঁড়াও!
হে মেয়ে ম্লান মেয়ে তুমি তোমার হাহাকার নিয়ে দাঁড়াও!
আমার অপার করুণার মধ্যে তোমারও বিস্তৃতি!
তুমি কোন্ দুঃসাহসে তবে
আমার স্বীকৃতি চাও,হে ম্লান মেয়ে আমার স্বীকৃতি চাও কেন?
তোমার মূর্খতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে,পৃথিবীটা পুড়ে যাবে
হেলেনের গ্রীস হবে পুনর্বার আমার কবিতা!
এই ভয়ে প্রতিশোধস্পৃহায়
আজো আমি ভালোবাসার কবিতা লিখিনি
কোনোদিন ভালোবাসার কবিতা লিখিনি।
হে মেয়ে হে ম্লান মেয়ে তোমাকে ভালোবাসি তাই
ভালোবাসার কবিতা আমি কোনোদিন কখনো লিখবো না!’

দুই পাখি

দুই পাখি
---সোনার তরী

খাঁচার পাখি ছিল     সোনার খাঁচাটিতে
               বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া     মিলন হল দোঁহে,
        কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের পাখি বলে,  খাঁচার পাখি ভাই,
       বনেতে যাই দোঁহে মিলে।
খাঁচার পাখি বলে-- বনের পাখি, আয়
        খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।'
                 বনের পাখি বলে-- "না,
আমি     শিকলে ধরা নাহি দিব।'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
আমি     কেমনে বনে বাহিরিব!'
বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি
                 বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার--
                 দোঁহার ভাষা দুইমতো।
বনের  পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই,
        বনের গান গাও দিখি।
খাঁচার পাখি বলে, বনের পাখি ভাই,
খাঁচার গান লহো শিখি।
          বনের পাখি বলে-- না,
আমি     শিখানো গান নাহি চাই।'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
আমি     কেমনে বন-গান গাই।'
         বনের পাখি বলে, "আকাশ ঘননীল,
        কোথাও বাধা নাহি তার।'
খাঁচার পাখি বলে, "খাঁচাটি পরিপাটি
        কেমন ঢাকা চারি ধার।'
বনের পাখি বলে, "আপনা ছাড়ি দাও
        মেঘের মাঝে একেবারে।'
খাঁচার পাখি বলে, নিরালা সুখকোণে
        বাঁধিয়া রাখো আপনারে!'
        বনের পাখি বলে-- "না,
সেথা     কোথায় উড়িবারে পাই!'
        খাঁচার পাখি বলে-- "হায়,
মেঘে     কোথায় বসিবার ঠাঁই!'
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে
        তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,
        নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,
        বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা,
        কাতরে কহে, "কাছে আয়!'
        বনের পাখি বলে--না,
কবে     খাঁচার রুধি দিবে দ্বার।
        খাঁচার পাখি বলে--হায়,
মোর     শকতি নাহি উড়িবার।

যেতে নাহি দিব

যেতে নাহি দিব
--সোনার তরী
  দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি; বেলা দ্বিপ্রহর;
          হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর।
          জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
          মধ্যাহ্ন-বাতাসে; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায়
          ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি
          ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রময়ী রাতি
          ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম--
          শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম।
          গিয়েছে আশ্বিন-- পূজার ছুটির শেষে
          ফিরে যেতে হবে আজি বহুদূরদেশে
          সেই কর্মস্থানে। ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
          বাঁধিছে জিনিসপত্র দড়াদড়ি লয়ে,
          হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ-ঘরে ও-ঘরে।
          ঘরের গৃহিণী, চক্ষু ছলছল করে,
          ব্যথিছে বক্ষের কাছে পাষাণের ভার,
          তবুও সময় তার নাহি কাঁদিবার
          একদণ্ড তরে; বিদায়ের আয়োজনে
          ব্যস্ত হয়ে ফিরে; যথেষ্ট না হয় মনে
          যত বাড়ে বোঝা। আমি বলি, "এ কী কাণ্ড!
          এত ঘট এত পট হাঁড়ি সরা ভাণ্ড
          বোতল বিছানা বাক্স  রাজ্যের বোঝাই
          কী করিব লয়ে  কিছু এর রেখে যাই
          কিছু লই সাথে।'
                          সে কথায় কর্ণপাত
          নাহি করে কোনো জন। "কী জানি দৈবাৎ
          এটা ওটা আবশ্যক যদি হয় শেষে
          তখন কোথায় পাবে বিভুঁই বিদেশে?
          সোনামুগ সরু চাল সুপারি ও পান;
         ও হাঁড়িতে ঢাকা আছে দুই-চারিখান
          গুড়ের পাটালি; কিছু ঝুনা নারিকেল;
           দুই ভাণ্ড ভালো রাই-সরিষার তেল;
           আমসত্ত্ব আমচুর; সের দুই দুধ--
           এই-সব শিশি কৌটা ওষুধবিষুধ।
           মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে,
           মাথা খাও, ভুলিয়ো না, খেয়ো মনে করে।'
           বুঝিনু যুক্তির কথা বৃথা বাক্যব্যয়।
           বোঝাই হইল উঁচু পর্বতের ন্যায়।
           তাকানু ঘড়ির পানে, তার পরে ফিরে
           চাহিনু প্রিয়ার মুখে; কহিলাম ধীরে,
           "তবে আসি'। অমনি ফিরায়ে মুখখানি
            নতশিরে চক্ষু-'পরে বস্ত্রাঞ্চল টানি
            অমঙ্গল অশ্রুজল করিল গোপন।
            বাহিরে দ্বারের কাছে বসি অন্যমন
            কন্যা মোর চারি বছরের। এতক্ষণ
            অন্য দিনে হয়ে যেত স্নান সমাপন,
            দুটি অন্ন মুখে না তুলিতে আঁখিপাতা
            মুদিয়া আসিত ঘুমে; আজি তার মাতা
            দেখে নাই তারে; এত বেলা হয়ে যায়
            নাই স্নানাহার। এতক্ষণ ছায়াপ্রায়
            ফিরিতেছিল সে মোর কাছে কাছে ঘেঁষে,
            চাহিয়া দেখিতেছিল মৌন নির্নিমেষে
            বিদায়ের আয়োজন। শ্রান্তদেহে এবে
            বাহিরের দ্বারপ্রান্তে কী জানি কী ভেবে
            চুপিচাপি বসে ছিল। কহিনু যখন
            "মা গো, আসি' সে কহিল বিষণ্ণ-নয়ন
            ম্লান মুখে, "যেতে আমি দিব না তোমায়।'
            যেখানে আছিল বসে রহিল সেথায়,
            ধরিল না বাহু মোর, রুধিল না দ্বার,
            শুধু নিজ হৃদয়ের স্নেহ-অধিকার
            প্রচারিল--"যেতে আমি দিব না তোমায়'।
            তবুও সময় হল শেষ, তবু হায়
            যেতে দিতে হল।
                                ওরে মোর মূঢ় মেয়ে,
            কে রে তুই, কোথা হতে কী শকতি পেয়ে
            কহিলি এমন কথা, এত স্পর্ধাভরে--
            "যেতে আমি দিব না তোমায়'? চরাচরে
            কাহারে রাখিবি ধরে দুটি ছোটো হাতে
            গরবিনী, সংগ্রাম করিবি কার সাথে
            বসি গৃহদ্বারপ্রান্তে শ্রান্ত ক্ষুদ্র দেহ
            শুধু লয়ে ওইটুকু বুকভরা স্নেহ।
            ব্যথিত হৃদয় হতে বহু ভয়ে লাজে
            মর্মের প্রার্থনা শুধু ব্যক্ত করা সাজে
            এ জগতে, শুধু বলে রাখা "যেতে দিতে
            ইচ্ছা নাহি'। হেন কথা কে পারে বলিতে
            "যেতে নাহি দিব'! শুনি তোর শিশুমুখে
            স্নেহের প্রবল গর্ববাণী, সকৌতুকে
            হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে,
            তুই শুধু পরাভূত চোখে জল ভ'রে
            দুয়ারে রহিলি বসে ছবির মতন,
            আমি দেখে চলে এনু মুছিয়া নয়ন।
             চলিতে চলিতে পথে হেরি দুই ধারে
             শরতের শস্যক্ষেত্র নত শস্যভারে
             রৌদ্র পোহাইছে। তরুশ্রেণী উদাসীন
             রাজপথপাশে, চেয়ে আছে সারাদিন
             আপন ছায়ার পানে। বহে খরবেগ
             শরতের ভরা গঙ্গা। শুভ্র খণ্ডমেঘ
             মাতৃদুগ্ধ পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
             সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মতো
             নীলাম্বরে শুয়ে। দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত
             যুগ-যুগান্তরক্লান্ত দিগন্তবিস্তৃত
             ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিশ্বাস।
              কী গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ,
              সমস্ত পৃথিবী। চলিতেছি যতদূর
              শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর
              "যেতে আমি দিব না তোমায়'। ধরণীর
              প্রান্ত হতে নীলাভ্রের সর্বপ্রান্ততীর
              ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে,
              "যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব।' সবে
               কহে "যেতে নাহি দিব'। তৃণ ক্ষুদ্র অতি
               তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
               কহিছেন প্রাণপণে "যেতে নাহি দিব'।
               আয়ুক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব-নিব,
               আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে
               কহিতেছে শত বার "যেতে দিব না রে'।
               এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
                সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে
                গভীর ক্রন্দন--"যেতে নাহি দিব'।   হায়,
                তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
                চলিতেছে এমনি অনাদি কাল হতে।
                প্রলয়সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
                প্রসারিত-ব্যগ্র-বাহু জ্বলন্ত-আঁখিতে
                "দিব না দিব না যেতে' ডাকিতে ডাকিতে
                হু হু করে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
                পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে।
                সম্মুখ-ঊর্মিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ
                "দিব না দিব না যেতে'-- নাহি শুনে কেউ
                নাহি কোনো সাড়া।
                                   চারি দিক হতে আজি
                 অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি
                 সেই বিশ্ব-মর্মভেদী করুণ ক্রন্দন
                 মোর কন্যাকণ্ঠস্বরে; শিশুর মতন
                 বিশ্বের অবোধ বাণী। চিরকাল ধরে
                 যাহা পায় তাই সে হারায়, তবু তো রে
                 শিথিল হল না মুষ্টি, তবু অবিরত
                 সেই চারি বৎসরের কন্যাটির মতো
                 অক্ষুণ্ন প্রেমের গর্বে কহিছে সে ডাকি
                 "যেতে নাহি দিব'। ম্লান মুখ, অশ্রু-আঁখি,
                 দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরব,
                 তবু প্রেম কিছুতে না মানে পরাভব,
                 তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কণ্ঠে কয়
                 "যেতে নাহি দিব'। যত বার পরাজয়
               তত বার কহে, "আমি ভালোবাসি যারে
                 সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে।
                 আমার আকাঙক্ষা-সম এমন আকুল,
                 এমন সকল-বাড়া, এমন অকূল,
                 এমন প্রবল বিশ্বে কিছু আছে আর!'
                 এত বলি দর্পভরে করে সে প্রচার
                 "যেতে নাহি দিব'। তখনি দেখিতে পায়,
                 শুষ্ক তুচ্ছ ধূলি-সম উড়ে চলে যায়
                 একটি নিশ্বাসে তার আদরের ধন;
                 অশ্রুজলে ভেসে যায় দুইটি নয়ন,
                 ছিন্নমূল তরু-সম পড়ে পৃথ্বীতলে
                 হতগর্ব নতশির। তবু প্রেম বলে,
                 "সত্যভঙ্গ হবে না বিধির। আমি তাঁর
                 পেয়েছি স্বাক্ষর-দেওয়া মহা অঙ্গীকার
                 চির-অধিকার-লিপি।'-- তাই স্ফীত বুকে
                 সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে
                 দাঁড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তনুলতা
                 বলে, "মৃত্যু তুমি নাই।-- হেন গর্বকথা!
                 মৃত্যু হাসে বসি। মরণপীড়িত সেই
                 চিরজীবী প্রেম আচ্ছন্ন করেছে এই
                 অনন্ত সংসার, বিষণ্ণ নয়ন-'পরে
                 অশ্রুবাষ্প-সম, ব্যাকুল আশঙ্কাভরে
                 চির-কম্পমান। আশাহীন শ্রান্ত আশা
                 টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশা
                 বিশ্বময়। আজি যেন পড়িছে নয়নে--
                 দুখানি অবোধ বাহু বিফল বাঁধনে
                 জড়ায়ে পড়িয়া আছে নিখিলেরে ঘিরে,
                 স্তব্ধ সকাতর। চঞ্চল স্রোতের নীরে
                 পড়ে আছে একখানি অচঞ্চল ছায়া--
                 অশ্রুবৃষ্টিভরা কোন্‌ মেঘের সে মায়া।
               তাই আজি শুনিতেছি তরুরক মর্মরে
                 এত ব্যাকুলতা; অলস ঔদাস্যভরে
                 মধ্যাহ্নের তপ্ত বায়ু মিছে খেলা করে
                 শুষ্ক পত্র লয়ে; বেলা ধীরে যায় চলে
                 ছায়া দীর্ঘতর করি অশত্থের তলে।
                 মেঠো সুরে কাঁদে যেন অনন্তের বাঁশি
                 বিশ্বের প্রান্তর-মাঝে; শুনিয়া উদাসী
                 বসুন্ধরা বসিয়া আছেন এলোচুলে
                 দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহ্নবীর কূলে
                 একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য-অঞ্চল
                 বক্ষে টানি দিয়া; স্থির নয়নযুগল
                 দূর নীলাম্বরে মগ্ন; মুখে নাহি বাণী।
                 দেখিলাম তাঁর সেই ম্লান মুখখানি
                 সেই দ্বারপ্রান্তে লীন, স্তব্ধ মর্মাহত
                 মোর চারি বৎসরের কন্যাটির মতো।

যে-কথা বলিতে চাই

যে-কথা বলিতে চাই
--বলাকা
যে-কথা বলিতে চাই,
         বলা হয় নাই,
             সে কেবল এই--
চিরদিবসের বিশ্ব আঁখিসম্মুখেই
             দেখিনু সহস্রবার
             দুয়ারে আমার।
     অপরিচিতের এই চির পরিচয়
এতই সহজে নিত্য ভরিয়াছে গভীর হৃদয়
     সে-কথা বলিতে পারি এমন সরল বাণী
          আমি নাহি জানি।
 
শূন্য প্রান্তরের গান বাজে ওই একা ছায়াবটে;
     নদীর এপারে ঢালু তটে
          চাষি করিতেছে চাষ;
     উড়ে চলিয়াছে হাঁস
ওপারের জনশূন্য তৃণশূন্য বালুতীরতলে।
          চলে কি না চলে
        ক্লান্তস্রোত শীর্ণ নদী, নিমেষ-নিহত
          আধো-জাগা নয়নের মতো।
          পথখানি বাঁকা
     বহুশত বরষের পদচিহ্ন-আঁকা
চলেছে মাঠের ধারে, ফসল-খেতের যেন মিতা,
     নদীসাথে কুটিরের বহে কুটুম্বিতা।
 
ফাল্গুনের এ-আলোয় এই গ্রাম, ওই শূন্য মাঠ,
              ওই খেয়াঘাট,
ওই নীল নদীরেখা, ওই দূর বালুকার কোলে
      নিভৃত জলের ধারে চখাচখি কাকলি-কল্লোলে
          যেখানে বসায় মেলা-- এই সব ছবি
              কতদিন দেখিয়াছে কবি।
শুধু এই চেয়ে দেখা, এই পথ বেয়ে চলে যাওয়া,
     এই আলো, এই হাওয়া,
এইমতো অস্ফুটধ্বনির গুঞ্জরণ,
     ভেসে-যাওয়া মেঘ হতে
     অকস্মাৎ নদীস্রোতে
          ছায়ার নিঃশব্দ সঞ্চরণ,
যে আনন্দ-বেদনায় এ জীবন বারেবারে করেছে উদাস
          হৃদয় খুঁজিছে আজি তাহারি প্রকাশ।

ইচ্ছে ছিলো

ইচ্ছে ছিলো
--যে জলে আগুন জ্বলে
ইচ্ছে ছিলো তোমাকে সম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো
ইচ্ছে ছিলো তোমাকেই সুখের পতাকা করে
শান্তির কপোত করে হৃদয়ে উড়াবো।

ইচ্ছে ছিলো সুনিপূণ মেকআপ-ম্যানের মতো
সূর্যালোকে কেবল সাজাবো তিমিরের সারাবেলা
পৌরুষের প্রেম দিয়ে তোমাকে বাজাবো, আহা তুমুল বাজাবো।

ইচ্ছে ছিলো নদীর বক্ষ থেকে জলে জলে শব্দ তুলে
রাখবো তোমার লাজুক চঞ্চুতে,
জন্মাবধি আমার শীতল চোখ
তাপ নেবে তোমার দু’চোখে।

ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
             রাজা আছে
             ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে।

তুমি চলে যাবে বলতেই

তুমি চলে যাবে বলতেই
---যদুবংশ ধ্বংসের আগে
তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে
পাড় ভাঙার শব্দ শুনি-
উঠে দাঁড়াতেই দুপুরের খুব গরম হাওয়া বয়,
মার্সির কাঁচ ভাঙতে শুরু করে;
দরোজা থেকে যখন এক পা বাড়াও আমি
দুই চোখে কিছুই দেখি না-
এর নাম তোমার বিদায়, আচ্ছা আসি, শুভরাত্রি,
খোদা হাফেজ।
তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন
মাথা নেড়ে না, না বলো
সঙ্গে সঙ্গে সব মাধবীলতার ঝোপ ভেঙে পড়ে;
তুমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকো
তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর আরো কিছু বনাঞ্চল উজাড়
হয়ে যায়,
তুমি উঠোন পেরুলে আমি কেবল শূন্যতা শূন্যতা
ছাড়া আর কিছুই দেখি না
আমার প্রিয় গ্রন্থগুলির সব পৃষ্ঠা কালো কালিতে ঢেকে যায়।
অথচ চোখের আড়াল অর্থ কতোটুকু যাওয়া,
কতোদূর যাওয়া- হয়তো নীলক্ষেত থেক বনানী, ঢাকা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট
তবু তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে
সেই থেকে অবিরাম কেবল পাড় ভাঙার শব্দ শুনি
পাতা ঝরার শব্দ শুনি-
আর কিছুই শুনি না।

তোমাকে পারিনি ছুঁতে

দূরে আছো দূরে
----সংকলিত
তোমাকে পারিনি ছুঁতে, তোমার তোমাকে-
উষ্ণ দেহ ছেনে ছেনে কুড়িয়েছি সুখ,
পরস্পর খুড়ে খুড়ে নিভৃতি খুঁজেছি।
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।

যেভাবে ঝিনুক খুলে মুক্ত খোঁজে লোকে
আমাকে খুলেই তুমি পেয়েছো অসুখ,
পেয়েছো কিনারাহীন আগুনের নদী।

শরীরের তীব্রতম গভীর উল্লাসে
তোমার চোখের ভাষা বিস্ময়ে পড়েছি-
তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।
জীবনের ’পরে রাখা বিশ্বাসের হাত
কখন শিথিল হয়ে ঝ’রে গেছে পাতা।
কখন হৃদয় ফেলে হৃদপিন্ড ছুঁয়ে
বোসে আছি উদাসীন আনন্দ মেলায়-

তোমাকে পারিনি ছুঁতে-আমার তোমাকে,
ক্ষাপাটে গ্রীবাজ যেন, নীল পটভূমি
তছ নছ কোরে গেছি শান্ত আকাশের।
অঝোর বৃষ্টিতে আমি ভিজিয়েছি হিয়া-

তোমার তোমাকে আমি ছুঁতে পারি নাই।।

অভিমান

অভিমান
---সংকলিত
কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে, জেনো
দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি।
ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে
তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও।

জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে
নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি।

অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি,
আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর ?

HINDI PROPOSE SHAYARI SMS

HINDI PROPOSE  SHAYARI   Dil ye mera Tumse Pyar karna chahta hai, Apni Mohabbat ka izhaar karna chahta hai, Dekha hai jab se Tumhe aey me...